ব্রেকিং নিউজ
  • বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা আলাপ হলো বাইডেন-মোদির

জ্যাকসন হাইটসে মাদক বিক্রেতাসহ অপরাধীদের উৎপাত বৃদ্ধি;উদ্বীগ্ন ব্যবসায়ীরা

বাংলা পত্রিকা রিপোর্ট:
প্রকাশিত: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১০
...
ছবি সংগৃহীত
নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে ছিন্নমূল মাদক ব্যবসায়ী ও অবৈধ ভেন্ডারদের উৎপাত দিন দিন বেড়েই চলছে। এতে করে জ্যাকসন হাইটসের রোজভেল্টসহ আশেপাশের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে পড়ছেন প্রতিনিয়ত। একাধিক ব্যবসায়ীদের অভিযোগ পুলিশ ও সিটি কর্তৃপক্ষ এদের নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় অবৈধ মাইগ্রেন্ট ও হোমলেসরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এদের উৎপাতের শিকার কোন ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তাদের হাতে লাঞ্চিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া জ্যাসন হাইটসে গত কয়েক মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে ঢুকে নগদ অর্থ, স্বর্ণ লুটসহ কয়েকটি দুর্ধষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসবের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না নিয়ে আসায় এ এলাকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিরাপত্তার শঙ্কা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জ্যাকসন হাইটসের ৭২, ৭৩, ৭৪, ৭৫সহ আশেপাশের এলাকায় বাংলাদেশী মালিকানাধীন ছোট-বড় ২ শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা হয় এ এলাকায়।
স্ট্রীটে গত ২৮ সেপ্টেম্বর জ্যাকসন হাইটসের রোজভেল্টে ৭৫ স্ট্রীটে বাংলাদেশী মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ ফার্মেসীর’ প্রবেশমুখের সামনে দাঁড়িয়ে এক ব্যাক্তি প্রকাশ্যে ঢেকে মাদক বিক্রির জন্য ক্রেতা খোঁজছিলো। এ সময় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার শাহাব আহমেদ ওই ব্যাক্তিকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সম্মুখ থেকে চলে যেতে বলেন। এতে ওই লোকটি ক্ষিপ্ত হয়ে শাহাব আহমেদকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো হুমকি দেয়। তিনি তাৎক্ষণিক জ্যাকসন হাইটসের প্রিসেন্ট পুলিশকে কল দেন। পুলিশ আসার আগেই লোকটি সটকে পড়ে। পরে পুলিশ এসে শাহাব আহমেদের স্টেটমেন্ট নিয়ে যায়। এ ঘটনায় কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।
এর আগে গত ১৩ আগস্ট রাত ১০টার দিকে জ্যাকসন হাইটসের ৭৩ স্ট্রীটে অবস্থিত ‘হাটবাজারে’ ৯০ হাজার ডলার লুটের ঘটনা ঘটে। দোকান খোলা থাকাবস্থায় প্রকাশ্যে এক দূবৃত্ত প্রতিষ্ঠানের ২য় তলায় প্রবেশ করে। সেখানে থাকা দোকানের ভল্ট ভেঙে নগদ ৯০ হাজার ডলার নিয়ে যায়। সিসিটিভির ফুটেজসহ সব তথ্য পুলিশের কাছে দেওয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনায় কাউকে শনাক্ত কিংবা আটক করতে পারেনি পুলিশ।
গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জ্যাকসন হাইটসে স্বর্ণের দোকানসহ বাংলাদেশী মালিকনাধীন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চুরি ও লুটের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও এসব এলাকায় পথচারীরাও ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ী, স্পা ব্যবসায়ীদের উৎপাতে বিপাকে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।
জ্যাকসন হাইটসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপকালে জানা যায়, প্রবাসী বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যবসা জমজমাট থাকে এ এলাকা। এমনকি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বেশ কয়েকটি সুপার স্টোর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে ক্রেতাদের সুবিধার জন্য। কয়েক বছর ধরে এ এলাকায় বিভিন্ন দেশের অবৈধ মাইগ্রেন্ট ও হোমলেসদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এদের অনেকে প্রতিদিন জ্যাকসন হাইটসে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সার্বক্ষণিক দাঁড়িয়ে মাদক ও অপরাধ সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় মাদক বিক্রি, ছিনতাই ও চুরিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড চালাচ্ছে। এসবের প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো হেনস্তার শিকার হতে হয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মীদের।
এ ছাড়াও সুযোগ বুঝে হোমলেসরা যে কোন দোকানে ঢুকে মালামাল ও অর্থ চুরি করে নিয়ে যায়। চুরির সময় হাতেনাতে ধরে পুলিশ কল করা হয়। পুলিশ আটক ব্যক্তির একপেশে কথা শুনে উল্টো তাকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগে ব্যবসায়ীদের হয়রানী করে। এ জন্য ভয়ে কেউ এরকম অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন না।
তারা আরো জানান, স্পা সেন্টারের ক্রেতা সংগ্রহের জন্য নারীদের ব্যবহার করে। স্পা সেন্টারের গ্রাহক সংগ্রহে সড়কের যত্রতত্র দাঁড়িয়ে তাদের অশালীন ভঙ্গিমার কারণে বিব্রতবোধ করেন পথচারীরা।
বাংলাদেশ ফার্মেসীর কর্ণধার শাহাব আহমেদ জানান, জ্যাকসন হাইটস এলাকায় হোমলেস ও মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িতদের উৎপাতে প্রতিনিয়ত আমরা অতিষ্ট। ফার্মেসীর সামনে টেবিল বসিয়ে খাবার কিংবা বিভিন্ন পণ্য বিক্রির অনুমতি নিয়ে আড়ালে তারা মাদক বিক্রি করে। এজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানে আসা গ্রাহকরা বিড়ম্বনার শিকার হোন। প্রায়ই মাদক বিক্রিসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডের ঘটনায় তাদের মধ্যে মারামারিরও ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো তাদের হাতে হেনস্তা হতে হয়। পুলিশ কল করলে তারা এসে কিছু সময় থেকে স্টেটমেন্ট নিয়ে যায়। কিন্তু পরে তাদের চিহ্নিত করে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হয়না।
তিনি বলেন, সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের ২৮ তারিখ আমার ফার্মেসীর সামনে দাঁড়িয়ে এক হোমলেস ব্যাক্তি মাদক বিক্রি করছিলো। আমি এটার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হই। পলিশ এসে আমার স্টেটমেন্ট নিয়ে যায়। অথচ এ এলাকায় এনওয়াইপিডির পুলিশের বেশ কয়েকটি টহল টিম এবং প্রতিটি পয়েন্টে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা রয়েছে। এসব থাকা সত্ত্বেও এখানো কাউকে আটক বা চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ। এ এলাকার কাউন্সিলরও ব্যবসায়ীদের নিরাপদে ব্যবসা পরিচালনায় সহযোগিতার ব্যাপারে উদাসীন।
এ বিষয়ে জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশ বিজনেস এসোসিয়েশনের (একাংশের) সভাপতি ও এল্ডার হোমকেয়ারের প্রেসিডেন্ট গিয়াস আহমেদ বলেন, হোমলেস ও ভ্রাম্যমাণ মাদক ব্যবসায়ীদের উৎপাত এবং অপরাধ কর্মকান্ডে জ্যাকসন হাইটস ব্যবসায়ীরা বিড়ম্বনার শিকার হোন। এসব প্রতিরোধে আমরা এ এলাকার প্রিসেন্ট পুলিশ কর্তৃপক্ষকে অবগত করে আসছি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরির ঘটনায় কাউকে আটক করলে তখন শুধু আটক ব্যাক্তির একপেশে অভিযোগে পুলিশ কোন ব্যবসায়ীকে যাতে হয়রানী না করেন সে জন্য দাবি জানিয়েছি। পুলিশকে আমরা বলেছি কোন চুরি কিংবা অপরাধমূলক ঘটনায় জড়িতকে দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পুলিশের টহল টিমকে আরো কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন এ এলাকার প্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ

advert

সর্বশেষ