ব্রেকিং নিউজ
  • বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যা আলাপ হলো বাইডেন-মোদির

নতুন পরিকল্পনায় হোম কেয়ার সার্ভিস, দু:শ্চিন্তায় জড়িত ব্যবসায়ীরা

শাহ্ সুমন, নিউইয়র্ক
প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১০
...
শাহ্ সুমন: নিউইয়র্কে হোমকেয়ারের সিডিপ্যাপ সার্ভিসে নতুন পরিকল্পনায় সার্ভিসের কার্যক্রম চালুর ঘোষণায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দু:শ্চিন্তায় রয়েছেন ব্যবসায় জড়িত প্রায় ৭ শত এজেন্সী কর্তৃপক্ষ। তাদের অধীনে কর্মরত কয়েক হাজার কর্মী কাজ হারাতে পারেন এমনটি দাবি এজেন্সী সংশ্লিষ্টদের।
 গভর্ণর ক্যাথি হোকুল হোম কেয়ার সার্ভিসের নতুন পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ ঘোষণা  করে দাবি করেন, নতুন পরিকল্পনায় হোম কেয়ার সার্ভিস দীর্ঘমেয়াদী ও শক্তিশালী এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ক্যাথি হোকুল এ নতুন পরিকল্পনা ও পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন।
এদিকে গভর্ণরের ঘোষিত নতুন পরিকল্পনায় হোম কেয়ার সার্ভিসের সিডিপ্যাপ সেবায় পরিবর্তন না হলেও নির্দিষ্ট একটি এজেন্সিকে দিয়ে কর্তৃপক্ষ কিভাবে কার্যক্রম চালাবেন সেটি স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন হোম কেয়ার সার্ভিস এজেন্টরা।
জানা গেছে, হোমকেয়ার ব্যবহারকারীদের উচ্চমানের সেবা প্রদান, পরিচর্যাকারীদের সহায়তা এবং সিডিপ্যাপ-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম দীর্ঘ মেয়াদী আর স্থিতিশীল করতে ষ্টেট ভিত্তিক পার্টনারশীপ জোটের ভিত্তিতে উদ্যোগ নেয়া হবে। নিউইয়র্ক স্টেটজুড়ে পার্টনারশীপ হিসেবে পাবলিক পার্টনারশীপ এলএলসি(পিপিএল) কাজ করবে। এই পিপিএল এর নিয়ন্ত্রণে নিউইয়র্কের বিভিন্ন স্থানে আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে চারটি এজেন্সী কার্যক্রম চালাবে। এজেন্সীগুলো হলো চাইনীজ আমেরিকান প্লানিং কাউন্সিল, কনসেপ্টস অব ইন্ডিপেন্ডেন্টস ইনক, অ্যাঞ্জেল ইন ইউর হোম, কনজ্যুামার ডিরেক্টেড চয়েজেস। এই চার এজেন্সির জোটে ৩০টির মতো উপ আঞ্চলিক সংগঠন থাকবে। সদর দপ্তরের তত্ত্বাবধানে এবং এজেন্সীর নিয়ন্ত্রণে ঐ জোটের কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। এতে এক হাজার ২০০ নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই উদ্যোগে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার নিউইয়র্কবাসী হোম কেয়ার সেবা পাবেন। এই পরিকল্পনায় যেসব এজেন্সীর অধীনে হোম কেয়ার সেবা গ্রহীতা রয়েছেন চলতি বছরের ১ অক্টোবর থেকে  আগামী বছর  ২০২৫ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে সে সকল সেবা গ্রহীতার সব তথ্য ও কাগজাদি ঐ নির্দিষ্ট পিপিএলের কাছে হস্তান্তর কাজ সম্পন্ন করতে হবে। আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে হস্তান্তরের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিবেন কর্তৃপক্ষ। হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে আগামী বছরের এপ্রিল মাস থেকে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন নিয়োগকৃত জোট হোম কেয়ার সেবা কাজ শুরু করবে।
হোম কেয়ার সেবার ব্যবসায় জড়িতদের সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ পরিকল্পনায় সিডিপ্যাপ এর সেবায় কোন পরিবর্তন না হলেও সেটার নিয়ন্ত্রণ নির্দিষ্ট কোম্পানীর অধীনে চলে যাওয়ায় এতে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসায় ধস নামবে। নিউইয়র্কে ছোট-বড় প্রায় ৬ শতাধিক এজেন্সী দীর্ঘদিন সিডিপ্যাপ প্রোগ্রামের আওতায় হোম কেয়ার সেবা পরিচালনার ব্যবসা করে আসছে। এতে প্রায় কয়েক হাজার কর্মী চাকরি করছেন। হোম কেয়ার সার্ভিসের পরিবর্তনে গভর্ণর এ পরিকল্পনায় ১২০০ নতুন কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসায় জড়িত ৬ শতাধিক এজেন্সীর কর্মরত কর্মীরা চাকরি হারাবেন। তাছাড়া সিডিপ্যাপ এর আড়াই লাখ কনজ্যুমারকে একসাথে হস্তান্তর এবং একটি এজেন্সীর দ্বারা সেবা প্রদানে বেশ জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কমিউনিটির অনেক সেবা গ্রহীতা যারা তারা পুরাতন এজেন্সীর মাধ্যমে সেবা গ্রহণে অভ্যস্ত। নতুন করে একটি এজেন্সীর মাধ্যমে সেবার মান কতটুকু বজায় থাকবে সে বিষয়ে সন্দীহান হোমকেয়ার সাথে জড়িত এজেন্সীর কর্তৃপক্ষ। একটি এজেন্সীর নিয়ন্ত্রণাধীন থাকায় সেবার মান কনজ্যুমারের যাচাই করার সুযোগ থাকবেনা। এছাড়া পিপিএল যে ৩০টি উপ আঞ্চলিক এজেন্সীকে দিয়ে কাজ করাবে সে সব এজেন্সীর তালিকাও প্রকাশ করা হয়নি এবং সে সব এজেন্সী কিভাবে কাজ করবে সেটিও স্পষ্ট নয় এমন দাবি বর্তমানে হোমকেয়ার সাথে জড়িত এজেন্সীর কর্তৃপক্ষের।
এদিকে হোম কেয়ার সেবায় নতুন পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপের নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন সিডিপ্যাপ প্রোগ্রাম অর্গনাইজেশন। মামলার শুনানী হয়েছে এবং রাং আগামী ১১ অক্টোবর এ সংক্রান্ত রায় দিবে। এছাড়াও হোম কেয়ার এজেন্সীগুলোকে পিএমপি প্রোগ্রামে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার যে ব্যবস্থা রেখেছে সে বিষয়ে আপত্তি তুলে আদালতে মামলা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
কমিউনিটি এক্টিভিস্ট আল আমিন রাসেল বলেন, সিডিপিএপি’র প্রোগ্রামের সেবার মান নিয়ে অনেক আলোচনা  হয়। এমনকি এটি নিয়ে নিউইয়র্ক পোস্ট ৩টি প্রতিবেদন করে। এরপর গভর্ণর জরুরি বিল ঘোষনা দেন এবং পিপিএল নামে একটি এজেন্সিকে দায়িত্ব দিতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ পদক্ষেপে সিডিপিএপি চালু থাকলেও শুধুমাত্র এটা পরিচালনা করবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া পিপিএল। এটি কার্যকর হলে আগের এজেন্সীর কয়েক হাজার কর্মী বেকার হয়ে যাবেন। লোকসানের মুখে পড়বে হোমকেয়ার ব্যবসার জড়িত এজেন্সিরা। এছাড়া পিপিএল এ সেবায় হোম কেয়ারের খরচ কমাতে পারবে দাবি করে কর্তপক্ষকে। কিন্তু এ খরচ তারা কিভাবে কমাবে সেটি অস্পষ্ট।
তিনি বলেন, এ প্রোগ্রামটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চালু রাখার জন্য সম্প্রতি ৩৬ জন ফেডারেল সিনেটর চিঠির মাধ্যমে পরামর্শ দিয়ে গর্ভণরকে জানিয়েছন যে নতুন পরিকল্পনায় এর সাথে জড়িত ক্ষুদ্র ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তারা সেটিকে আগের সার্ভিসে রেখে ডিপার্টমেন্ট অব হেলথকে সংযুক্ত করে মনিটরিং বৃদ্ধির পরামর্শ দেন সিনেটররা। তাতে হোম কেয়ার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রতস্ত হবেনা।

গোল্ডেন এজ হোমকেয়ারের কর্ণধার শাহ্ নেওয়াজ বলেন, গভর্ণরের নতুন ঘোষণাকৃত পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এখনো অস্পষ্ট ধারণায় আছি। সিডিপিএপি’র পরিবর্তন হবেনা ঠিক আছে, কিন্তু নতুন কোম্পানির সাথে জয়েন্ট এজেন্সী হিসেবে কাজ করতে পারবো কিনা এবং কিভাবে সেটি কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে সেটিও জানিনা। আমরা হয়তো আমাদের অধীনে থাকা কিছু সেবা গ্রহীতাকে স্থানান্তর করতে পারবো। কিন্তু সব সেবা গ্রহীতাকে স্থানান্তর করা সম্ভব না। এ পরিকল্পনার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতে একটি মামলা রয়েছে। সেটির রায় হলে বোঝা যাবে এটি কার্যকর থাকবে কি না।
তিনি বলেন, তারা বলছে ১২০০ জনের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু আমাদের এখানে ৬ থেকে ৭শত এজেন্সীর প্রায় ৭ হাজারেরও বেশি লোক কাজ করছেন। নতুন প্রক্রিয়া কার্যকর হলে এসব কর্মী কাজ হারাবেন। তখন তাদের কি হবে।
শাহ্ নেওয়াজ আরো বলেন, নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হলে সেবা গ্রহীতাদের পরিবারের সদস্য অথবা আত্মীয় স্বজন যারা কেয়ার গিভার হিসেবে কাজ করছেন তারাও এ দায়িত্ব থেকে বাদ পড়বেন। কারণ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তাদের নির্দিষ্ট কেয়ার গিভার দিয়ে হোম কেয়ার সেবা প্রদান করা হবে।
ইমিগ্র্যান্ট এল্ডার হোম কেয়ার এর কর্ণধার গিয়াস আহমেদ বলেন, প্রায় আড়াই লক্ষাধিক সেবা গ্রহীতাকে মান বজায় রেখে একটি কোম্পানী সেবা দেয়া সম্ভব হবেনা। একক নিয়ন্ত্রাধীন হওয়ায় সেবার মানে কোন প্রতিযোগিতা থাকবেনা। সেবাগ্রহীতারাও মান যাচাই বাছাই করার সুযোগ থাকবেনা। এ বিষয়ে হোমকেয়ার এজেন্সীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছে। আশা করি আদালত বিষয়টি বিবেচনা করবেন।
গভর্ণর ক্যাথি হোকূল তাঁর ঘোষণায় বলেন, ‘হোম কেয়ার সার্ভিস ব্যবহারকারীদের রক্ষা আর সেবাকারীদের সমর্থন করতে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিডিপ্যাপ-এর মতো প্রোগ্রামটি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সিডিপ্যাপ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিউইয়র্কবাসীদের প্রয়োজনীয় উন্নতমানের সেবা প্রদান।’

সর্বশেষ

advert

সর্বশেষ

লড়ছেন ‘রুহুল-জাহিদ’ ও সেলিম-আলী’ প্যানেল : ভোট পেতে নানা প্রতিশ্রুতি : প্রচারণা তুঙ্গে

১৯দিন পর বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন