সিলেটে শতকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা : ত্রাণের জন্য হাহাকার

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৩ মে ২০২২, ০১:০৫
...

সিলেট নগরী থেকে নামছে পানি। টানা ৬ দিনের বন্যার তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে নগর এলাকা। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। পুরাতন লাইন হওয়ায় কোনো কোনো পাড়া-মহল্লায় গ্যাসের লাইন বদল করা হচ্ছে। এ যেনো ধ্বংসযজ্ঞের পর জেগে উঠছে নগর। এমন অবস্থায় নগরেই শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাড়ার রাস্তা ভেঙে একাকার। মূল রাস্তায়ও বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে পানি ঢুকে এখন দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে

সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরে নদী তীরবর্তী ১২টি ওয়ার্ডে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পানি নামার কারণে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ভেসে উঠেছে। এজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তবে, অনেক স্থানে এখনো পানি রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে পানির নিচে। বৃহত্তর উপশহর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। সুরমার পানি উপচে রাতারাতি অন্তত ৩০টি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ে। 

এতে করে উপশহরের প্রতিটি বাসার নিচতলা ডুবে যায়। বন্যার পানি উঠে যাওয়ায় একদিনে সাধারণ মানুষেরই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকানপাটের ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। ব্যবসায়ী রুমা বেগম জানিয়েছেন, উপশহরের সব এলাকায় দোকানপাটে পানি উঠে যায়। রাতে দোকান বন্ধ করে ব্যবসায়ীরা বাসায় গিয়েছিলেন। সকালে এসে দেখেন দোকানে পানি। হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে দোকানপাট তলিয়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ অনেকেই দোকান খুলতে পারেননি। এখন দোকান খুলে দেখা যাচ্ছে কেবল ক্ষতি আর ক্ষতি। উপশহরের বাসিন্দা আব্দুল কাইয়ূম জানিয়েছেন, প্রায় সব ব্লকেই পানি ঢুকেছে। প্রতিটি বাসার নিচতলায় পানি ছিল। এতে করে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এখন পানি নেমে যাওয়ার পর দুর্গতি বাড়ছে। সেইসঙ্গে অসুখ বিসুখ ছড়িয়ে পড়ছে। উপশহরের অর্ধশতাধিক সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। আর পানির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলেছে। সড়ক চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেছে। এখনো উপশহরে এক ফুট পানি।

কিন্তু রাস্তার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠেছে অনেক স্থানে। বিটুমিন উঠে গেছে। কোথাও কোথাও ছড়া রক্ষা ওয়াল হেলে পড়েছে। কুশিঘাট এলাকায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আরসিসি ঢালাই করা এলাকা ছাড়া যেসব এলাকায় বিটুমিনের সড়ক সেগুলোর বেহাল দশা। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের দুই তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে যায়। এখনো অর্ধেক এলাকা পানির নিচে। আজকালের মধ্যে পানি নেমে যাওয়ার আশা করছেন লোকজন। ঘাষিটুলা, খেয়াঘাট, কুয়ারপাড়, বেতের বাজার, কানিশাইল, মজুমদার পাড়া, শামীমাবাদের ৫০টির মতো সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো রাস্তা যানবাহন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া বস্তি এলাকায় বাসাবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওই এলাকায় সিটি করপোরেশনের পানির পাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ স্বাভাবিক হলেও এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া. নগরীর দক্ষিণ সুরমা, টুকেরবাজারসহ কয়েকটি এলাকায় রাস্তাঘাট ও সরকারি স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, গোটা উপশহরই পানির নিচে ছিল। এখনো আছে। প্রতিটি রাস্তারই বিটুমিন উঠে গেছে। কয়েকটি স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি, প্রটেকশন ওয়াল হেলে পড়েছে। বিদ্যুতের সাব-স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ ছাড়া নদীর পাড়ে অবস্থিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের দেয়াল হেলে পড়েছে। এখনই রক্ষাণাবেক্ষণ করতে না পারলে দেয়াল টিকিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে। ঘাষিটুলায় রাস্তাঘাটের ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি পানির পাম্পে পানি উঠে যাওয়ার কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাম্পও নষ্ট হয়ে গেছে। ট্রাক ট্রার্মিনালের দেয়াল হেলে পড়েছে। দ্রুত সংস্কার না করতে পারলে সিলেটের বৃহৎ এই টার্মিনালের দেয়াল টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তিনি জানান, সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। এরপর সেগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হবে। নগরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা কালিঘাট। পাইকারী আড়ত। টানা ৫ দিন পানির নিচে ছিল নগরের গোটা কালিঘাট এলাকা। ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, এক রাতের পাহাড়ি ঢলে কালিঘাট পুরোটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। কয়েস আহমদের চালের দোকানে ৬০০ বস্তা চাল ভিজে গেছে।

৬ দিন কালিঘাট এলাকা পানির নিচে থাকার কারণে অনেকেই দোকানপাট খুলতে পারেননি। গতকাল থেকে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খুলে পরিষ্কার করছেন। ভিজে চাল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে অনেকেই বস্তা নদীতে ফেলে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার শুকিয়ে সেগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করছেন। কালিঘাট চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, চালের বাজার, পিয়াজপট্টিসহ গোটা কালিঘাটের নদীর তীরবর্তী শতাধিক দোকান পানির নিচে নিমজ্জিত ছিল। অনেকেই দোকান খুলতে পারেননি। ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মালামালও খালাস করা সম্ভব হয়নি। এতে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি। অন্তত ২৫ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তিনি জানান, পাশের পাইলট স্কুলে ব্যবসায়ীদের গোডাউনের জন্য আব্দার জানানো হয়েছিল।

কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া না দেয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্সের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানিয়েছেন, কালিঘাট পাইকারী আড়ত। এখানে ক্ষতি হয়েছে আড়তের। কাজিরবাজার হচ্ছে চালের মিল। সেখানে মিলে থাকা শ’ শ’ টন চাল নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে আমরা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে কথা বলবো। বন্যায় ৫ দিনে চোখের সামনে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। কালিঘাট ও কাজির বাজারের ব্যবসায়ীদের অকাল বন্যার কবল থেকে বাঁচাতে হলে নদীর তীরে বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি নদী খনন জরুরি বলে জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি জানিয়েছেন, এবারের বন্যা অনেকটা শিক্ষা দিয়ে গেছে। এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগী হয়ে কাজ করতে হবে।

ত্রাণের জন্য হাহাকার
এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছে না বন্যার্তরা। এক সপ্তাহ ধরে অনেকেই শুকনো খাবার খেয়ে আছেন। কেউ ত্রাণ নিয়ে গেলে ভিড় করছেন বানভাসী মানুষ। এক মুঠো ত্রাণের আশায় চলছে হুড়োহুড়িও। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা লোকজনও এক বেলা খেয়ে অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছে। বন্যার পানি না কমায় এখনো কয়েকশ’ পরিবার বসবাস করছে। দুর্গম এলাকাগুলোতে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। বন্যার্তরা পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন। কিন্তু প্রশাসন বলছে; ত্রাণের সংকট নেই। যা চাওয়া হচ্ছে সবই দেয়া হচ্ছে

সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদের পক্ষে জৈন্তাপুর এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন ছাত্র সমাজের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুজিবুর রহমান ডালিম। তিনি অভিযোগ করেছেন- পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ। জৈন্তাপুরের ছাতাইরখা হাওরের তীরবর্তী গ্রাম, সেনগ্রাম, পূর্ব গর্দনা, পশ্চিম গর্দনার মানুষকে তার দলের পক্ষ থেকে গতকাল শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে। চারদিন ধরে এলাকার মানুষ অভুক্ত রয়েছে। 

ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ হিসেবে শুকনো খাবার দেয়া হলেও সরকারি পর্যায়ে এলাকার মানুষ ত্রাণ পাননি বলে তার কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। বন্যা কবলিত দরবস্তের ইউপি মেম্বার বশির আহমদ জানিয়েছেন- তার ওয়ার্ডের চার লাইন, খরগ্রাম এলাকা বেশি বন্যা কবলিত। এলাকায় অনেক শ্রমিকের বসবাস। ত্রাণ না পাওয়ায় তিনদিন লঙ্গরখানা খুলে তারা খাবার বিতরণ করেছেন। লঙ্গরখানায়ও টান পড়েছে। গত দু’দিন ধরে লঙ্গরখানাও বন্ধ। কিন্তু এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ পাননি এলাকার মানুষ। একই অবস্থায় রয়েছে পাত্তন, মোটাগঞ্জ, শুকনপুর, হরহরা গ্রামের বাসিন্দারা। এসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় বাড়িতেই রয়েছে। যারা আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে তারাও পড়েছেন ত্রাণ সংকটে। তবে- জৈন্তাপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল আহমদ জানিয়েছেন- ‘আমরা ত্রাণ দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে দেয়া হচ্ছে। সবাই যাতে ত্রাণ পায় সে কারণে তালিকা করে দেয়া হচ্ছে।’ কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। গত শনিবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ ফিরে আসার পর কোম্পানীগঞ্জ সদরে ত্রাণ নিয়ে টানাটানির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার পরও এলাকার মানুষ পর্যাপ্ত ত্রাণ পায়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে। তেলিখাল ইউপির বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, আমাদের কাছে কেউ আসেনি। তার এলাকার মানুষ অনাহারে, অর্ধাহারে বসবাস করছে বলে জানান তিনি।’ তবে- কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- তাদের এলাকায় ত্রাণের সংকট নেই। পর্যাপ্ত ত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে- ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ চলছে সিলেট নগরীর কাউন্সিলরদের মধ্যে।

গতকাল সিলেট সিটি করপোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, নগরের ১২টি ওয়ার্ডের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নগর কর্তৃপক্ষকে সরকার থেকে ১৩ টন চাল দেয়া হয়েছে। এর বাইরে আরো দুই লাখ টাকা নগদ বরাদ্দ এসেছে। এ চাল একদিনের বরাদ্দও নয়। এরপরও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে প্রতিদিনই খিচুড়ি ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। নগরের বন্যার্তদের জন্য আরও পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো প্রয়োজন বলে জানান তিনি। সিলেট নগরের কানিশাইলসহ কয়েকটি এলাকার বন্যার্ত লোকজন জানিয়েছেন- শুকনো খাবার খেয়ে তো বেশিদিন থাকা যায় না। অথচ ৪-৫ দিন ধরে এক বেলা আধপেটা খেয়ে অনেকেই আছেন। এতে করে অসুস্থতার হারও বাড়ছে। সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌফিক বক্স লিপন জানিয়েছেন- ‘যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা পর্যাপ্ত নয়। বন্যার্তদের ত্রাণ দেয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে মন্ত্রী মহোদয়ের কাছে আবেদন জানিয়েছি।’ জানান- ‘গতকাল পর্যন্ত বন্যার্তদের মধ্যে শুকনো খাবার ও খিচুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় ত্রাণের চাল বিতরণ করা হয়েছে।’  

এদিকে- সিলেট নগর ও আশপাশ এলাকার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও নতুন করে গোলাপগঞ্জ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগর এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত রয়েছে। এসব এলাকায়ও খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়ভাবে তাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। বিশ্বনাথেও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি রয়েছে। ওই এলাকায় সরকারি ভাবে যে ত্রাণ দেয়া হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানিয়েছেন বন্যা আক্রান্ত এলাকার লোকজন। গতকাল দুপুরে বিশ্বনাথের বন্যা কবলিত অলংকারী, কামালপুরসহ কয়েকটি গ্রাম পরিদর্শন করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী। তিনি এ সময় তার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে বন্যার্ত লোকজনের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করেছেন। তবে- এলাকায় স্থানীয় এমপি মোকাব্বির খান নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্বনাথের মানুষ। তাদের দাবি- ত্রাণের চাল কোথায় আসছে, কে আনছে, কারা নিচ্ছে কিছুই তারা জানেন না। এদিকে- ওই ৬টি উপজেলায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে। তারা শুকনো খাবার খেয়ে দিন যাপন করছেন বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা। সিলেট জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন- সিলেট জেলায় প্রায় ১২-১৩ লাখ মানুষ বন্যায় কবলিত হয়েছেন। বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে জেলা প্রশাসনের হাতে।

যে উপজেলায় ত্রাণের জন্য যত চাহিদা দেয়া হচ্ছে; ততই দেয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসক মজিবর রহমান যখন ঢাকায় যে চাহিদা করছে, সবই দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান- ইতিমধ্যে ৩৪৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে এখনো মজুত আছে ২৪৪ টন চাল। এ ছাড়া বরাদ্দ পাওয়া ২৫ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শুকনো খাবার মজুত আছে প্রায় ৬ হাজার প্যাকেট। তিনি দাবি করেন- ত্রাণের সংকট নেই। চাহিদা অনুযায়ী ত্রাণ দেয়া হচ্ছে।
সিসিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক: প্লাবিত এলাকার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত, পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্ত বাসা-বাড়ির তালিকা প্রণয়ন এবং নগরকে বন্যা মুক্ত রাখতে করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি উচ্চতর সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। মহানগরের বন্যা পরিস্থিতিতে সিলেটের সকল দপ্তর-সংস্থা ও অংশীজনদের নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতকাল দুপুরে সিলেট সিটি করপোরেশনের আয়োজনে নগর ভবনের সম্মেলন কক্ষে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে নির্দেশনা দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অতি বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও উজান থেকে নেমে পানিতে সৃষ্ট বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কিছুটা সময় লাগবে। তবুও দুর্গত মানুষের কল্যাণে সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদেরও এগিয়ে আসতে হবে। সভায় মহানগরে প্লাবিত এলাকার নাগরিকদের ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে মহানগরের প্লাবিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, বাসা-বাড়ির তালিকা প্রণয়ন ও করণীয় বিষয়ক স্ববিস্তার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়। এ লক্ষ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন, সওজ এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি উচ্চতর কমিটি গঠন করা হয়। সভায় কাউন্সিলররা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা।

বিএনপির অভিযোগ: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সিলেটের জনজীবন বিপর্যস্ত হলেও এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথা ব্যথা নেই। সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, তারা বন্যার্ত মানুষকে ত্রাণ না দিয়ে উল্টো পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা করেছে। এই সরকারের জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়, তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। ফ্যাসিস্ট সরকারের সীমাহীন জুলুম নিপীড়ন উপেক্ষা করে বিএনপি আর্ত মানবতার কল্যাণে পাশে রয়েছে। তিনি গতকাল সিলেট জেলা বিএনপি’র উদ্যোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর, পশ্চিম ইসলামপুর, উত্তর রণিখাইসহ ৬টি ইউনিয়নের বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী।

এ সময় জেলা বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ছাড়াও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, যে কোম্পানীগঞ্জে ত্রাণ না দিয়ে উল্টো বন্যার্ত অসহায় মানুষের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ করা হয়েছে। সেই কোম্পানীগঞ্জে বিএনপি’র পক্ষ থেকে হাজারের বেশি পরিবারের মাঝে সুশৃঙ্খলভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, জেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি হাজী শাহাব উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর, জেলা বিএনপি নেতা কামরুল হাসান শাহীন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতি হাজী আব্দুল মনাফ, সহ-সভাপতি হাজী উমর আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ডা. নুরুল আমীন, শুক্কুর আলী, বিএনপি নেতা এডভোকেট বুরহান উদ্দিন খন্দকার ফরহাদ প্রমুখ।

সর্বশেষ

সর্বশেষ