ঈদেরআগে ফিতরা দেওয়ার বিধান ও ফজিলত কী?

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৯ এপ্রিল ২০২২, ১৬:০৪
...

রমজানেররোজা শেষ হওয়ার আগে গরিবের মুখে হাসি ফোটানোর অন্যতম মাধ্যম সাদকাতুল ফিতর। ইসলামে নির্ধারিত পরিমাণ ফিতরা (অর্থ) পেয়ে অসহায় মানুষ পরিবারের প্রয়োজনে ব্যয় করবে। ধনীর সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করবে।ফিতরাআদায় করা গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এমন অনেকেই আছেন, যারা সাদকায়ে ফিতর সম্পর্কে ধারণা রাখেন না। সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়ও জানেন না। তাদের জন্য সাদকায়ে ফিতরের পরিচয়, ফজিলত, ফিতর আদায়ে করণীয় বিষয়সমূহ তুলে ধরা হলো-

সাদকায়েফিতর

সাদকায়েফিতর হলো- রোজা খোলার সাদকা বা দান। এমনদানকে সাদকায়ে ফিতর বলা হয়, যা পুরো রমজানমাস রোজা রাখার পর ঈদের দিনসব সামর্থ্যবানদের জন্য আদায় করা আবশ্যক। ঈদের আগে এ বিশেষ দানদিয়েই গরিব-অসহায় মানুষ ঈদের আনন্দে মেতে ওঠবে।

সাদকায়েফিতর একটি ইবাদত

কোরআনুলকারিমে সাকদায়ে ফিতর দ্বারা পরিশুদ্ধ-পবিত্র হওয়ার কথা বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

قَدۡ اَفۡلَحَ مَنۡ تَزَکّٰی

'নিশ্চয়সাফল্য লাভ করবে সে, যে পরিশুদ্ধ হয়৷' (সুরা আলা : আয়াত ১৪)

মুফাসসিরিনেরকেরামের মতে, এ পরিশুদ্ধ দ্বারাসাদকায়ে ফিতরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে। অর্থাৎ যারা সাদকায়ে ফিতর আদায় করবেন তারাই (রোজা ভুল-ত্রুটি থেকে পরিশুদ্ধ হয়ে) পাবেন সফলতা।

পরিশুদ্ধবা পবিত্রতার অর্থ কুফর ও শিরক ত্যাগকরে ঈমান আনা, অসৎ আচার-আচরণ ত্যাগ করে সদাচার অবলম্বন করা এবং অসৎকাজ ত্যাগ করে সৎকাজ করা। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যা নাজিল হয়েছেতার অনুসরণ করা।

আয়াতেরআরেক অর্থ, ধনসম্পদের যাকাত প্ৰদান করা। তবে যাকাতকেও এ কারণে যাকাতবলা হয় যে, তা ধন-সম্পদকেপরিশুদ্ধ করে। এখানে تَزَكَّىٰ শব্দের অর্থ ব্যাপক হতে পারে। ফলে ঈমানগত ও চরিত্রগত পরিশুদ্ধিএবং আর্থিক যাকাত প্ৰদান সবই এই আয়াতের অন্তর্ভুক্তবলে বিবেচিত হবে। (ফাতহুল কাদির)আবারকেউ কেউ বলেছেন, যে নিজের আত্মাকেনোংরা আচরণ থেকে এবং অন্তরকে শিরক ও পাপাচারের পঙ্কিলতাথেকে পবিত্র করে। (আহসানুল বয়ান)

রমজানেরশেষ দিকে ঈদের আগের বিশেষ আর্থিক ইবাদতও এটি। সাদকায়ে ফিতর নবিজী কর্তৃক ঘোষিত ফরজ ইবাদত। হাদিসের পরিভাষায় আর্থিক ইবাদতকে সাদকাতুল ফিতর আবার জাকাতুল ফিতরও বলা হয়। হাদিসে পাকে তিনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেনতাহলো-

হজরতআব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাকাতুল ফিতর ফরজ করেছেন এবং প্রত্যেক স্বাধীন ও গোলাম এবংনারী-পুরুষের জন্য এক সা' খেজুরকিংবা যদ দান করারনির্দেশ দিয়েছেন।' (বুখারি, মুসলিম)

 

সাদকাতুলফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন, অনর্থক অশালীন কথা ও কাজে রোজারযে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণের জন্যএবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য।' (আবু দাউদ)

২. হজরত জারির রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রামজানের রোজা সাদকাতুল ফিতর আদায় করার আগ পর্যন্ত আসমান-জমিনের মাঝে ঝুলন্ত থাকে।' (তারগিব ওয়াত তারহিব)

৩. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন ঘোষকের মাধ্যমে পবিত্র নগরী মক্কার পথে পথে এ ঘোষণা দেওয়ালেনযে- জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপরসাদাক্বায়ে ফিতর অপরিহার্য। (তাহলো)- দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা একসা অন্য খাদ্যবস্তু।' (তিরমিজি)

ঈদেরআগে ফিতরা দিতে মুসলিম উম্মাহর করণীয়

১. সাদকায়ে ফিতর আদায় করা মুমিনের জন্য ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক অত্যাবশ্যকীয় বিধান ৷

২. হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- 'তুহরাতুল্লিস সায়িম' অর্থাৎ একমাস সিয়াম সাধনায় মুমিনের অনাকাঙ্খিত ত্রুটি-বিচ্যুতির কাফফারা হলো সাদকায়ে ফিতর।

৩. হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী- 'তুমাতুল্লিলমাসাকিন' অর্থাৎ সমাজের অসহায়, দুঃস্থ-দরিদ্র, রিক্তহস্ত জনগোষ্ঠি যাতে বছরান্তে একটি দিন অন্তত খেয়ে-পরে আনন্দ উদযাপন করতে পারে ৷

৪. দীর্ঘ এক মাস রোজারাখার পরে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক পানাহারের অনুমতি মিলায় তার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ৷

আল্লাহতাআলা মুসলিম উম্মাহকে সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব অনুধাবন করে রমজানের রোজার ত্রুটি-বিচু্যতি থেকে মুক্তি লাভের তাওফিক দান করুন। সাদকায়ে ফিতরের গুরুত্ব ও ফজিলত লাভকরার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ