‘রাইস কয়েন’ প্রতারণার নতুন ফাঁদ

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০১
...

প্রত্নতত্ত্ব বলে দেশে এবং বিদেশে ‘রাইস কয়েন’-এর চাহিদা রয়েছে এমন নতুন প্রতারণার জাল ফেলে মাঠে সক্রিয় একটি চক্র। চক্রটি ইতিমধ্যে প্রায় ডজনখানেক বিত্তশালী ও সাধারণ মানুষকে 

ফাঁদে ফেলছে। এ চক্রের সদস্যরা তাদের কাছ থেকে এক-একটি রাইস কয়েনের মাধ্যমে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। তারা অনেকটা না বুঝে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। কেউ টাকার লোভে পড়ে এ চক্রটি পা দিয়েছেন ফাঁদে। প্রতারণার ফাঁদে ফেলার জন্য রাইস কয়েন চক্রটি মাঠে কিছু টাকাও বিনিয়োগ করেছে। যাতে তারা অন্যকে বিশ্বাস করাতে পারে যে, সত্যিই রাইস কয়েন একটি প্রত্নতত্ত্ব! তারা কাউকে কাউকে ম্যাগনেটিক কয়েন নাম দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের অর্থ।
চক্রটি বিত্তশালীদের রাইস কয়েন দেখিয়ে বলে যে, এটি তাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকায় কিনে যদি অন্য হাত হয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যায় তাহলে ১ থেকে দেড় কোটি টাকা পাওয়া যাবে।

তাদের আশ্বাসে বিত্তশালী ও সাধারণ মানুষ ফাঁদে পা দিয়ে খোয়াচ্ছে বিপুল পরিমাণের অর্থ। অনেক বিত্তশালী প্রতারণার শিকার হয়েও সামাজিক মান সম্মানের ভয়ে তারা পরিবার-পরিজন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযোগ করতে যান না। সিআইডি বলছে, রাইস কয়েনের একটি চক্র ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সক্রিয় রয়েছে। তারা অত্যন্ত স্মার্ট ও শিক্ষিত। এ চক্রের সদস্যরা খুবই ধুরন্ধর প্রকৃতির। তারা সহজেই মানুষকে বোকা বানাতে পারে এবং লোভের জালে ফেলতে পারে। কয়েকদিন আগে এ চক্রের ফাঁদে পড়েছেন ঢাকার একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। দুইদিন আগে পল্লবী এলাকা থেকে রাইস কয়েন চক্রের ২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। এ ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়েছে। পুরো চক্রকে ধরতে মাঠে কাজ করছে সিআইডি।
 

এ বিষয়ে সিআইডি’র সদর দপ্তরের অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (ইকোনমিক কারেন্সি) মো. হুমায়ুন কবীর জানান, ‘রাইস কয়েনের একটি চক্র ঢাকায় সক্রিয় রয়েছে। কয়েকদিন আগে এ চক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য সিআইডি তৎপর রয়েছে।’
সিআইডি সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাইস কয়েন চক্রটি চোরাই তামার তার গলিয়ে একটি বড় আকারের কয়েন তৈরি করে। সেই কয়েনে আবার তারা ধানের শীষের প্রতিকৃতি লাগায় যাতে মানুষ এটি বিশ্বাস করে যে, সত্যিই এটি রাইস কয়েন এবং প্রত্নতাত্ত্বিক একটি জিনিস। এটি বাসায় সাজিয়ে রাখা যাবে বা বিদেশে রপ্তানি করলে বড় অংকের টাকা পাওয়া যাবে।
 

সূত্র জানায়, চক্রটি প্রথমে বিত্তশালীদের স্বজনদের সঙ্গে বিভিন্ন কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে। এ সম্পর্ক প্রায় ১ বছর ধরে চলার পর তাদের মধ্যে একটি আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে। পরে ওই চক্রটি স্বজনদের মাধ্যমে বিত্তশালী লোকদের টার্গেট করে রাইস কয়েন কেনার প্রস্তাব করেন। কোনো কোনো সময় তারা বাংলাদেশে থাকা আফ্রিকা এবং ইইউ’র কিছু রাষ্ট্রের প্রতারক নাগরিকদের সঙ্গে করে ওই বিত্তশালীর কাছে নিয়ে যান যাতে রাইস কয়েনের বিষয়ে তার বিশ্বাস জন্মে। এরপর কোনো একটি পাঁচ তারকা হোটেল বা কোনো একটি বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে বলে রাইস কয়েন বিক্রির দরবার বসানো হয়। এ সময় ধুরন্ধর প্রকৃতির প্রতারক চক্রটি এই কয়েন সমন্ধে এমনভাবে ইংরেজি ও শুদ্ধ বাংলায় উপস্থাপনা করবে। তখন বিত্তশালী ব্যক্তি বা সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করতে বাধ্য হন যে, সত্যিই এটি অনেক মূল্যবান জিনিস এবং এটি কিনলে কোনো অর্থের ক্ষতি হবে না।
 

সূত্র জানায়, চক্রটির বিভিন্ন কথার প্রলোভনে পড়ে বিত্তশালী ব্যক্তি যখন কয়েনটি কিনতে চান তখন এটির দাম হাঁকানো হয় নিম্নে ৩০ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা। এ সময় বিদেশি নাগরিক কয়েনটি বেশি দামে কেনার জন্য মিথ্যা প্রস্তাব দেয়। রাইস কয়েন চক্রটি বিত্তশালীকে বলে যে, তারা খুবই দেশপ্রেমিক। দেশের প্রত্নতত্ত্ব সম্পদ অন্যের দেশে চলে যাক তারা এটি হতে চান না। অনেক সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা দেশের সম্পদ দেশেই রাখতে চান।
কোনো কোনো বিত্তশালীকে চক্রটি প্রস্তাব দেন যে, এখন অর্ধেক টাকা দেন। পরে বাকিটা দেবেন। তাদের এমন কথার প্রেক্ষিতে বিত্তশালীর মন গলে গিয়ে ওই রাইস কয়েনটি খরিদ করেন। পরে চক্রটি তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে এবং বাসা বদল করে অন্যস্থানে পালিয়ে যায়। এভাবেই চক্রটি বিত্তশালীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পল্লবী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া দুইজন কমপক্ষে ১ ডজন বিত্তশালীকে তাদের রাইস কয়েনের ফাঁদে ফেলেছেন।

সর্বশেষ