আইভীর হ্যাটট্রিক : কারচুপির অভিযোগ তৈমুরের

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০১
...

রাজনীতির সব ‘মারপ্যাঁচ’ আর ‘সমীকরণ’কে উড়িয়ে দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে ফের নির্বাচিত হয়েছেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এটি তার হ্যাটট্রিক তথা টানা তৃতীয়বারের জয়। এর আগে ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার জয়ী হয়েছিলেন তিনি।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ভোটগ্রহণের পর বিকেল থেকে ফলাফল আসতে থাকে। নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহফুজা আক্তার ফল ঘোষণা করেন। সন্ধ্যা নাগাদই আইভীর জয়ের আভাস মিলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত তার জয়েরই খবর আসে।

ঘোষিত ১৯২টি কেন্দ্রের বেসরকারি ফলাফলে দেখা যায়, মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।

আইভী ও তৈমূর আলম ছাড়া মেয়র পদে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের এ বি এম সিরাজুল মামুন (দেয়ালঘড়ি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাছুম বিল্লাহ (হাতপাখা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস (হাতঘড়ি), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মো. জসিম উদ্দিন (বটগাছ) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল ইসলাম (ঘোড়া) লড়াই করেছেন।

এর আগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়। সিটি করপোরেশনের ২৭ ওয়ার্ডের ১৯২টি ভোটকেন্দ্রে এক হাজার ৩৩৩ ভোটকক্ষে হয় নির্বাচন।

ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে পাঁচ লাখ ১৭ হাজার ৩৬১ জন ভোটারের বিপরীতে প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম বা সংঘাতের অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

ভোট দেওয়ার পরই নিজের জয়ের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেছিলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে বিজয়ী হবো। নৌকা জিতবেই। জয়ের বিষয়ে শতভাগ নিশ্চিত।’শেষ পর্যন্ত এই জয়ের মাধ্যমে আইভী দেশের ইতিহাসে প্রথম নারী হিসেবে সিটি করপোরেশনের হ্যাটট্রিক মেয়র হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।

এছাড়া সকালে ভোট দিয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘সরকার বা নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান কোনো কারচুপি না হলে জনগণের যে কোনো রায় মেনে নেবো।’

আইভীর সঙ্গে নির্বাচনকেন্দ্রিক দূরত্ব তৈরি হলেও বিকেলে ভোট দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, আমি নৌকার নির্বাচন করেছি। আমি নৌকার কথা বলেছি। আমি আশা করব নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।

ইভিএমে কারচুপির অভিযোগ তৈমুরের
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারচুপির জন্য নিজের পরাজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার।

তিনি বলেন, বেশকিছু কেন্দ্রে ইভিএম ত্রুটিপূর্ণ ও স্লো ছিল। অনেক লোক ভোট দিতে পারেননি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফলাফল কেন মেনে নেবো? নারায়ণগঞ্জের জনগণ মেনে নেবে না।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) নাসিক নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে পরাজয়ের খবরে শহরের মাসদাইর এলাকায় এক প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন তৈমূর আলম খন্দকার। মজলুম মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিক্রিয়ার কথা জানান তিনি।

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জের মানুষকে শ্রদ্ধা জানাই। তারা আমার কাছ থেকে সরে যায়নি। তারা জীবন দিয়ে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছাকে প্রতিফলন ঘটানোর জন্য নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার আমার লোকগুলোকে গ্রেফতার করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছেন। বাকিটা করেছে নির্বাচন কমিশন।’

বিজয়ী মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার বিষয়ে আগেও মন্তব্য করিনি, এখনও করবো না। খেলা হয়েছে সরকার বনাম জনগণ, সরকার বনাম তৈমূর আলম খন্দকার। আমি সিটি করপোরেশনের জন্য কী করেছি তা তাকে জিজ্ঞেস করেন। নারায়ণগঞ্জবাসী এগুলো জানে। বিএনপি আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে।’

সমর্থন করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ জানান তৈমূর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখবেন হেফাজতের মামলা দেওয়া হয়েছে সবাইকে। এদের মধ্যে হিন্দু লোকও আছে। এখন দেখা যায় মুসলমান তো করেই, হিন্দুরাও হেফাজত করে! আজ সকাল থেকে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বন্দরের সমন্বয়ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমার চিফ এজেন্টের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় একটা মানুষ স্বতন্ত্র দাঁড়িয়ে কীভাবে ঠিক থাকতে পারে? তারপরও জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছে। আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’

সর্বশেষ

সর্বশেষ