আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। প্রায় ২ বছর আগে সাংবিধানিকভাবে বিলুপ্ত হওয়া যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান নিউইয়র্কে রীতিমত সংবাদ সম্মেলন করে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার বিতর্কিত মেয়র আবদুল কাদের মির্জার মতো বক্তব্য দেয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সাবেক সদস্য ড. প্রদীপ রঞ্জন কর অভিযোগ করেন, সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে একজন অনুপ্রবেশকারী। তাই তিনি অর্থের বিনিময়ে ছাত্রশিবির, জাগোদলের লোকজনকেও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটিতে নিয়েছিলেন তিনি। সাবেক বাণিজ্য সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ ও সাবেক শিক্ষা সম্পাদক এম এ করিম জাহাঙ্গির অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নিজের অসাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার মতলবে যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগ, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগে বিবাদ লাগিয়েছেন। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠনের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন না করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য কমিটি গঠন করেছেন। শুধু তাই নয়, আওয়ামী লীগের জন্ম ইতিহাস নিয়েও তাচ্ছিল্য করেছেন তিনি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদী সিদ্দিকুর রহমান ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন এ দলের সমস্ত নিয়ম-কানুন, গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য এবং দলের নেতাকর্মীদের প্রলোভন দেখিয়ে যা ইচ্ছা তাই করে চলছেন। কোনো নিয়ম-কানুন ব্যতিত দলের অনেককে পদের লোভ দেখিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকার চেষ্টা করছেন। তারা আরও অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারী হিসেবে পরিচিত ড. সিদ্দিকুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে তিনি বিএনপি-জামাতের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করছেন। এবার তিনি তা নিজেই প্রমাণ করলেন। অজান্তেই নিজের গোমর নিজেই ফাঁস করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের (বিলুপ্ত ঘোষিত) সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকর রহমান সম্প্রতি দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। স্থানীয় সময় শনিবার (জুন ৫) দুপুরে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় দেশের পরিস্থিতি নিয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য বা বড় অসুবিধা হলো দেশে কোন শক্তিশালী বিরোধী দল নাই। সরকার বা শেখ হাসিনার সমালোচনা করার মতো কেউ নেই। তাই আসুন সরকারের সমালোচনা করি এবং পাশাপাশি একটি শক্তিশালী বিরোধীদল গঠন করি। তিনি বলেন, মুজিবকোট গায়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ নামধারী নেতারা কিভাবে এত মিথ্যা কথা বলেন দেশে না গেলে দেখতে পেতেন না। এসব নেতাদের মিথ্যাচার দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন। দেশে গিয়ে করোনাকালীন সময় তিনি অসহায় মানুষদেরকে কিছু অর্থ সহায়তা দেয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন, কিন্তু কাকে দায়িত্ব দেবেন সেরকম মানুষ খুঁজে পাননি তিনি। কারণ স্থানীয় নেতাকর্মীসহ সর্বত্রই দুর্নীতিবাজে ভরে গেছে। তিনি বলেন, দেশের টাকা লুটপাট করে যারা লন্ডনে, যুক্তরাষ্ট্রে কিংবা কানাডার বেগম পাড়ায় যারা বাড়ি করে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন তাদেরকে এখান থেকে আমরা কিছু করতে পারবো না, তবে তাদেরকে চোর বলে সামাজিকভাবে বয়কট ও ঘৃণা করি। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সকল নির্দেশনা উপেক্ষা করে নিজের ইচ্ছেমত দল পরিচালনার পর এবার দেশ থেকে ফিরে এসেই তিনি দল ও সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় দলের ভেতরে নতুন করে বিতর্কের সৃষ্টি করেন। ড. সিদ্দিকর রহমানের পছন্দের সাবেক প্রচার সম্পাদক আব্দুল হামিদ এ বিষয়টি নিয়ে ফেসবুক মন্তব্য করেন যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সিদ্দিকুর রহমান যে অভিযোগ তুলেছেন সেটাকে তিনি সাধুবাদ জানান। কিন্তু তিনি কতটুকু সৎ সেটাও তো দেখার বিষয়। বিষয়টা এমন না তো আঙ্গুর ফল টক। অথবা আমরা বলতে পারি সুযোগের অভাবে আমরা সবাই সৎ। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশে একটা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। এটা কি ভাবে হয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র কি চাকরী করেন, তার আয়ের উৎস কি? তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সকল দুর্নীতিবাদের বিচার চাই। কিন্তু দুর্নীতি মুক্ত একজন মানুষ যদি এই আন্দলন করে তাহলে প্রবাসীরা এটাকে সাদরে গ্রহণ করবে। আমরা যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় কাদের মীর্জা দেখতে চাই না। রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ মানুষগুলো হতাশা এবং ক্ষোভ থেকে এগুলো করছে, অথবা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার জন্য অপচেষ্টা নয় তো! তার জ্বলন্ত প্রমাণ কাদের মির্জা। এদিকে, দলের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৭টি অপকর্মের কথা তুলে ধরে কেন্দ্রিয় আওয়ামীগসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। উল্লেখ্য, ৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাগরিক সংবর্ধনা সভায় তিনি নিজেই সভাপতিত্ব করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সাংবিধানিক বিধিতে বিলুপ্ত হয়েছে।