যুক্তরাষ্ট্রের সিয়ার্স’র বিরুদ্ধে ৩৩৮ কোটি টাকার মামলা জিতেছে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০২
...
বাংলা পত্রিকা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকের জায়ান্ট ক্রেতা ‘সিয়ার্স’ এর বিরুদ্ধে একটি মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশী তৈরি পোশাক সরবরাহকারীদের গ্রæপ। মোট ২১টি প্রতিষ্ঠান এই গ্রæপের সদস্য। প্রায় ৪ কোটি ডলারের (৩৩৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা) বেশি অর্থের এই মামলায় জয় পায় তারা। আমেরিকান কোন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এত বড় অংকের ক্ষতিপূরণ মামলায় জয়লাভ একটি বিরল ঘটনা।
গত ৩০ জানুয়ারী, শনিবার আমেরিকান অর্থনীতিবিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মহামারি করোনাভাইরাসের প্রভাবে সৃষ্ট সংকট ও পশ্চিমা জায়ান্ট ক্রেতাদের অনৈতিক ব্যবসায়িক মন্দার কারণে তৈরি পোশাকের অসংখ্য সরবরাহকারীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে। গত বছরের জুনে বাংলাদেশী ২১টি কোম্পানির পক্ষে মামলা দায়ের করেন জোসেফ ই স্যারাচেক। সিয়ার্সের বিরুদ্ধে শুনানি শেষে ৪ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ জয় পেয়েছে।
মামলায় স্যারাচেক দাবি করেন, বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর সিয়ার্স প্রচুর পরিমাণ অব্যবহৃত কাপড় এবং পাওনা বড় অংকের অর্থ বকেয়া রেখে কোম্পানিগুলোর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয়, সিয়ার্স কৌশলে কোম্পানিগুলোর বিল পরিশোধ না করার লক্ষ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করে।
রায় পক্ষে আসার প্রেক্ষিতে স্যারাচেক নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশী কোম্পানিগুলো ট্রান্সফর্মকোর মধ্যস্থতায় জরিমানাকৃত অর্থের বড় অংশ হাতে পেয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ট্রান্সফর্মকো আমেরিকান বিলিওনিয়ার এডওয়ার্ড ল্যাম্পার্ট কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান। গত বছর ট্রান্সফর্মকো নিজস্ব অর্থায়নে সিয়ার্স এবং কে-মার্ট কিনে নিয়ে দেউলিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করে প্রতিষ্ঠান দুটিকে। প্রতিবেদনে স্যারাচেক বলেন, ‘বকেয়া অর্থের একটা বড় অংশ ফিরে পাওয়ায় কোম্পানিগুলো অত্যন্ত আনন্দিত’
নির্ধারিত কাজ একাধিকবার সম্পন্ন করার পরও সিয়ার্স বাংলাদেশী কোম্পানীগুলোর বকেয়া ফেরত দিতে অসমর্থ ছিল। সিয়ার্সের নিজের অর্থসংকট এবং পূর্বের বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থতা বিষয়টিকে ত্বরান্বিত করায় ভূমিকা রেখেছে মারাত্মকভাবে।
ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৬ কোটি ডলার মূল্যমানের পোষাক গত বছর সিয়ার্সের উদ্দেশ্যে তৈরী করে পাঠিয়েছে। কিন্ত প্রাথমিকভাবে নামেমাত্র অর্থ পরিশোধ করে সিয়ার্স চুক্তি বাস্তবায়ন করায় অনেক কোম্পানি প্রচন্ড অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে।
মামলায় জয়ের পর প্রায় ভংগুর কোম্পানিগুলো গত সেপ্টেম্বরে কিছু অর্থ ফেরৎ পেয়েছে এবং তাদের নিয়মিত বিরতিতে অর্থ প্রাপ্তি অব্যাহত রয়েছে। কোম্পানি পক্ষের আইনজীবী আদালতে বলেন, সিয়ার্সের অর্ডার বাতিলকরণের ফলে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় একধরণের মানবিক সংকট সৃষ্টিতে ভুমিকা পালন করেছে।
শুধু সিয়ার্স নয় নামকরা ব্র্যান্ড যেমন ফরএভার ২১, রোজ ড্রেস ফর লেস, দ্যা চিল্ড্রেনস প্লেস, কোহল’স কেএসএস, গেøাবাল ব্র্যান্ডস শপ, আর্কেডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪০০০ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাকের অর্ডার তৈরীর পর মূল্য বকেয়া রাখে।
করোনাকালে এই বকেয়া অর্থ কিছু কোম্পানীকে প্রায় ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় এবং অনেক কোম্পানী শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়।
অপরদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে এইচএন্ডএম, পিভিএইচ, ভিএফ কর্পোরেশন, ভিএফসি, জারা এবং সিএ-এর মতো ২৪ টি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান বকেয়া অর্থ পরিশোধ করেছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০০ কোটি ডলার সমমূল্যের পোশাক রপ্তানি হয়েছে করোনাভাইরাস আঘাত হানার পূর্বে।

সর্বশেষ

সর্বশেষ