শোকাবহ পরিবেশে সিলেটে জিমামের দাফন সম্পন্ন

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৪:০২
...
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): কথায় বলে ‘পৃথিবীতে সবচেয়ে ভারী বস্তু কি? তার উত্তর হচ্চে পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ’। আর এই ভাড়ী বস্তুই বহন করলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির অতি পরিচিত মুখ, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সংগঠক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সিলেটবাসীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েল। তিনি নিজ কাধে একমাত্র পুত্র জিমাম মোহাম্মদ চৌধুরীর মরদেহ দাফন করলেন সিলেটে। নিউইয়র্কে থেকে শুক্রবার (৫ ফেব্রæয়ারী) জিমামের মরদেহ ঢাকায় পৌছার পর হেলিকপ্টার যোগে সিলেটে নেয়া হয় এবং সেখানে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে হযরত শাহজালাল (রা:) মাজর সংলগ্ন কবর স্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয় বলে সিলেট থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। খবর ইউএনএ’র।
জিমামের বয়স হয়েছিলো ২১ বছর। গত ৩০ জানুয়ারী শনিবার কুইন্সের হিলসাইড এভিনিউ সংলগ্ন তাদের বাসায় সুদর্শন, টসবগে এই তরুণ জিমাম-কে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্ন ইলাহি রাজেউন)। ঘুমের মধ্যেই হৃদযন্তের ত্রিয়া বন্ধ হয়ে সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে বলে জানা গেছে। জিমাম নিউইয়র্ক সিটি ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র ছিলেন। জিয়ামের অকাল ও আকস্মিক মৃত্যুতে কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। উল্লেখ্য, জুয়েল চৌধুরী নিউইয়র্কের আহলুল বাইত মিশন মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টারের সভাপতি এবং সিলেট সদর সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত।
এদিকে ৩১ জানুয়ারী রোববার বাদ এশা উপসাইডস্থ আহলুল বাইত মিশন মসজিদ এন্ড ইসলামিক সেন্টারে জিমাম-এর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী বিশেষ করে সিলেটবাসী অংশ নেন। পরবর্তীতে সোমবার ব্রঙ্কসে দ্বিতীয় দফা জানাজা শেষে ঐদিন রাতে আমিরাত এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে জিমামের মরদেহ ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ঢাকায় পিতা জুয়েল চৌধুরী নিজেই পুত্র জিমামের মরদেহ গ্রহণ করেন। এরপর হেলিকপ্টারে মরদেহ সিলেটে নিয়ে যাওয়া হয়। সিলেটে জিমামের মৃত লাশ দেখে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। আত্বীয়-স্বজন ছাড়াও বিপুল সংখ্যক লোক জিমাম-কে শেষ বারের মতো এক নজর দেখতে ভীর জমান।
জানা যায়, জুয়েল চৌধুরী স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সপরিবারে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে গিয়েছেন। গত ২৭ জানুয়ারী, বুধবার জিমাম নিউইয়র্কে ফিরে আসেন। পারিবারিক বন্ধু পরিবার তাকে জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিয়ে আসেন। ওই পরিবারের সাথেই বুধবার রাতে ছিলেন জিমাম। পরদিন ২৮ জানুয়ারী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জামাইকাস্থ হিলসাইড এভিনিউর বাসায় নামিয়ে দেয়া হয় তাকে। ২৯ জানুয়ারী শুক্রবার দিনভর জিমামের সাথে নিউইয়র্কে কারো যোগাযোগ করার খবর জানা যায়নি। ৩০ জানুয়ারী শনিবার দুপুরে জিমামের বন্ধু বাসায় এসে ডাকাডাকি করে তার কোন সাড়া পাচ্ছিলেন না। পরে একই বাসার নীচের তলায় থাকা লোকজনের সাহায্যে জিমামের ঘরে প্রবেশ করেন তারা। বিকেল ৪টার দিকে জিমামের নিশ্চল শরীরে দেখে দ্রæত ৯১১ এ কল দেয়া হয়। পুলিশ এসে জিমামের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে তার মরদেহ মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। জিমাম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশে সিলেট শহরে নিজের বাসায় অবস্থানরত জিমামের বাবা জুয়েল চৌধুরী ও মা লুবানা চৌধুরীকে একমাত্র ছেলের মৃত্যুর কথা জানানো হয়। পুত্রের আকস্মিক মৃত্যুও খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন পিতা-মাতা। পারিবারিক সিদ্ধান্তে সব আনুষ্ঠানিকতার পর নিউইয়র্কে জানাজা শেষে জিমামের মরদেহ দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সিলেট থেকে জেড চৌধুরী জুয়েল মিডিয়াকে বলেন, গত ৩১ ডিসেম্বর মা-বাবা এবং দুই বোনের সাথে জিমাম সিলেট গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ঘনিষ্ঠ এক অসুস্থ বন্ধুর অস্ত্রোপচারের সময় হাসপাতালে থাকার কথা বলে দুই দিন আগে নিউইয়র্কে ফিরে আসেন জিমাম। দুই সপ্তাহ পরই পুনরায় সিলেটে মা-বাবার কাছে ফেরার কথা ছিল বলে জিমামের বাবা। তিনি বলেন, তার ছেলে ঘুমের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন বলে লাশ উদ্ধারের সময় আসা প্যারামেডিক্সরা জানিয়েছেন। টেলিফোনে বন্ধুরা সাড়া না পেয়ে বাসার সামনে এসে বেসমেন্টের লোকজনের কাছে জিমামের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলো। পরে দরজায় কড়া নেড়েও সাড়া না পেয়ে পুলিশে ফোন করা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, জিমামের লাশ মেডিকেল এক্সামিনারের ছাড়পত্র পাবার পরই নিউইয়র্কে উডসাইডে আহলে বায়াত মসজিদে জানাযার পর বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের ছাড়পত্রে ঢাকা হয়ে সিলেটে আনার পর হযরত শাহ জালাল (রা:) এর মাজার সংলগ্ন পারিবারিক গোরস্থানে জিমামের মরদেহ দাফন করা হবে।
শোক প্রকাশ: জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেড চৌধুরী জুয়েলের পুত্র জিমাম-এর অকাল মৃত্যুতে সংগঠনের সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল ও সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, বাংলাদেশ সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন সিদ্দিকী, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি বদরুল হোসেন খান, বাংলাদেশ সোসাইটি ও জালালালবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক দুলাল মিয়া এনাম, বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি আজিমুল রহমান বুরহান ও মস্তফা কামাল, বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশন-এর সভাপতি আহবাব চৌধুরী খোকন ও সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার চৌধুরী, জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির উপদেষ্টা ছদরুন নূর, সভাপতি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আল আমীন রাসেল, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা জামাল হোসাইন ও মোহাম্মদ সেবুল মিয়া প্রমুখ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে মরহুম জিমামের বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করেছেন।

সর্বশেষ

সর্বশেষ