সৌদি আরবকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টার গণভবন পরিদর্শন, দিলেন জাদুঘর নির্মাণের নির্দেশনা
সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
আয়কর নিয়ে যে সুখবর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
ডিবিপ্রধানকে ৩ প্রশ্ন
ডিবি কার্যালয়ে সোহেল তাজ , শিক্ষার্থীদের বুকে যেন আর একটি গুলি না লাগে
বাংলা পত্রিকা ডেস্ক প্রকাশিত: ২৯ জুলাই ২০২৪, ২৩:০৭
সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেছেন, সাধারণ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের সকল মানুষের মতোই আমি উদ্বিগ্ন। সোনার বাংলাদেশে মেধা দিয়ে যোগ্যতা, চিন্তার স্বাধীনতা থাকবে। যা ক্ষুন্ন হচ্ছে। কোটা আন্দোলন নিয়ে অশান্তি পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শত শত প্রাণহানিতে ক্ষত তৈরি করেছে। বিবেককে নাড়া দিয়েছে। যে কারণে আমি ডিবিতে এসেছি। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আশা না ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তোমাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। দেশটা তোমাদের। তোমাদেরই এই দেশ গড়তে হবে।
সুসময় আসবে। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়কের সঙ্গে দেখা করতে যান সোহেল তাজ। এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি একথা বলেন। শিক্ষার্থীদের বুকে যেন আর একটি গুলিও না লাগে সেই আহবান জানিয়েছেন সোহেল তাজ।
সোহেল তাজ বলেন, আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলাম যে ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ককে ডিবিতে রাখা হয়েছে গ্রেপ্তার হিসেবে নাকি সেফ কাস্টডি। সেফ কাস্টডি হলে দেখা করতে চাই। আর যদি গ্রেপ্তার হয় তাহলে আমার কোনও প্রশ্ন নেই। জবাবে হারুন অর রশীদ বলেছেন, ৬ সমন্বয়কারী নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো তাই হেফাজতে আনা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া দেখা করতে দেওয়া যাবে না। আমি তখন তাকে বলেছিলাম ৬ সমন্বয়কারী কি আপনার কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিল, জবাবে তিনি বলেন, আমরা তাদের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছিলাম তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ৬ সমন্বয়কারীকে কখন সেফ কাস্টডি থেকে মুক্তি দেওয়া হবে প্রশ্নের জবাবে হারুন সাহেব বলেছেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন নির্দেশ দিবে তখনই।
সোহেল তাজ বলেন, কোটা আন্দোলনে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কিছুই না। কারণ সম্পদ ধ্বংস হয়েছে সেগুলো গড়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু একটি প্রাণ কী ফেরত পাবো? প্রাণের মূল্য কোটি কোটি টাকার বেশি। এসময় তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের বুকে আর একটি গুলিও যেন না লাগে। তিনি বলেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ড নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে। কোনভাবেই বিচারবহির্ভূত হত্যা করা যাবে না। নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান সাবেক এই স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী।
ডিবিপ্রধানের কাছে তিনটি প্রশ্ন নিয়ে এসেছিলেন জানিয়ে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার প্রথম প্রশ্ন ছিল, এই সমন্বয়কারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে নাকি নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন, যদি গ্রেপ্তার হয়ে থাকে, তাহলে আমার কোনো দাবি নেই। কিন্তু যদি নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। ডিবিপ্রধান আমাকে পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানিয়েছেন, এই ছয় সমন্বয়কারী যেহেতু তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, সেই কারণে তাঁদের নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
সোহেল তাজ আরও বলেন, ‘এই কথা শুনে আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনারা কীভাবে বুঝলেন তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা কি আপনাদের জানিয়েছিল, অনুরোধ করেছিল?” আমাকে তখন তিনি বলেছেন, না। ওনারা বুঝতে পেরেছেন মনিটরিং (নজরদারি) করে। যেহেতু নিরাপদ হেফাজতে আছে, আমি তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। প্রত্যুত্তরে আমাকে জানানো হয়, দেখা করতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দেখা করতে হবে।’
সোহেল তাজ বলেন, ‘আমার তৃতীয় প্রশ্ন ছিল, সমন্বয়কদের কখন নিরাপদ হেফাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হবে? জবাবে ডিবিপ্রধান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যখন তাঁকে নির্দেশনা দেবেন, তখনই তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’
নাহিদ ইসলামসহ কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাত সমন্বয়ক বর্তমানে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাঁদের মধ্যে ছয়জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে সেখানে চিকিৎসাধীন নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদসহ তিন সমন্বয়ককে তুলে নিয়ে আসেন ডিবির কর্মকর্তারা। পরের দুই দিন আরও বাকি সমন্বয়কদের তুলে আনেন তাঁরা।
গতকাল রাতে নাহিদসহ ছয় সমন্বয়ক এক ভিডিও বার্তায় তাঁদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। কাছাকাছি সময় ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ এক ফেসবুক পোস্টে এই সমন্বয়কদের সঙ্গে এক টেবিলে বসে খাওয়ার ছবি দিয়েছেন। আজ হাইকোর্টে একটি রিটের শুনানিতে এ প্রসঙ্গ উঠলে আদালত বলেছেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’
গোয়েন্দা পুলিশপ্রধানের ওই ছবি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে নানা মন্তব্য করেছেন। এ ছাড়া ডিবি হেফাজতে থাকা অবস্থায় ছয় সমন্বয়কের কর্মসূচি প্রত্যাহারের বার্তার সঙ্গে ভিন্নমত জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন এই আন্দোলনের একাধিক সমন্বয়ক।
এ প্রেক্ষাপটে ডিবি কার্যালয়ে আসার কারণ ব্যাখ্যা করে সোহেল তাজ বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে দেশে অশান্তি বিরাজ করছে। এখানে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে। নিরীহ পাঁচ বছরের বাচ্চা থেকে শুরু করে ৮–১০–১৫–১৬ বছরের ছাত্র, সাধারণ মানুষসহ অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এটা আমাদের সবাইকে আহত করেছে। আমাদের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই বিবেকের কারণেই ব্যক্তিগতভাবে ডিবি অফিসে এসেছি।’
সমন্বয়কদের বিষয়ে প্রশ্ন রেখে সোহেল তাজ বলেন, একজন নাগরিক যদি অনুরোধ করে, তাহলে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অনুরোধের বাইরে যদি নিরাপদ হেফাজতে নেওয়া হয়, তাহলে এটা কি নিরাপদ হেফাজত নাকি গ্রেপ্তার?
সোহেল তাজ বলেন, ‘এই ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুই নয়। ক্ষয়ক্ষতি কোনো বিষয় নয়। যে সম্পদ ধ্বংস হয়েছে, সেগুলো তো জনগণের করের টাকায় করা হয়েছে। এগুলো জনগণের সম্পদ। এগুলো হয়তো ভবিষ্যতে আবার গড়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু একটি প্রাণ যেটা আমরা হারিয়েছি, একটি প্রাণও কি আমরা ফেরত পাব? এই প্রাণ কি ফিরে আসবে? আমাদের মনে রাখতে হবে, মুখ্য জিনিসটা কী? প্রাণের মূল্য কিন্তু কোটি কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদ্দেশে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের ছাত্রছাত্রী ভাইবোনের বুকে যাতে আর একটাও গুলি না যায়। আপনারা বিরত থাকুন। এটা ঠিক নয়।’
চলমান পরিস্থিতিতে সরকার কোনো ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘এখানে সমূহ সমাধান প্রয়োজন। সমাধানের প্রথম কাজ যেটা করতে হবে, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্টভাবে স্বতন্ত্রভাবে তদন্ত করে বিচার করতে হবে। এগুলোর জন্য যারা দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যাকাণ্ড করা যাবে না। এই সমাধান রাজনৈতিকভাবে করতে হবে। সমাধান সবাইকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে করতে হবে।’
আন্দোলনকারীদের প্রতি তাঁর কোনো বার্তা আছে কি না, এমন প্রশ্নে সোহেল তাজ বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ স্বপ্ন যেন বিনষ্ট না হয়। এই দেশ তোমাদের। এই দেশ তোমাদেরই গড়তে হবে। ডু নট লুজ হোপ (আশা ছেড়ো না)। সামনে ভালো দিন আসবে, আশা ছাড়া যাবে না। এই দেশ তোমাদের সম্পদ। তোমাদেরই গড়তে হবে।’