দেশব্যাপী কারফিউ এবং সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করেছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী শান্তি শৃঙ্খলারক্ষা ও জন নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪ অনুযায়ী আজ হতে সান্ধ্য আইন কার্যকর করা হলো।
জেলা প্রশাসনের ক্ষেত্রে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনার এই প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশ বাস্তবায়ন করবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় সশস্ত্রবাহিনী মোতায়েনের জন্যও তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানানো হয়েছে পরিপত্রে।
কারফিউ বা সান্ধ্য আইনের সময়সীমা এবং শর্ত কী হবে তাও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা পুলিশ কমিশনার নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ আহমেদ।
শুট অ্যাট সাইট হবে: ওবায়দুল কাদের
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কারফিউ প্রসঙ্গে বলেছেন “এটা অবশ্যই কারফিউ। এটা নিয়ম অনুযায়ীই হবে এবং সেটা শুট অ্যাট সাইট হবে”।
অর্থাৎ, দেখা মাত্রই গুলির নির্দেশের কথা জানিয়েছেন মি. কাদের।
ঢাকায় গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকের পর কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।
তিনি বলেন, “আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বিটিভি সম্পূর্ণরুপে পুড়িয়ে দিয়েছে। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে”।
তিনি জানান, বৈঠকে ১৪ দলের নেতারা দেশের নিরাপত্তা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও জনগনের জান-মাল রক্ষায় সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের কথা বলেন।
এছাড়াও এই বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল বর্তমান সংকট উত্তরণে দেশবাসির সহযোগিতা চেয়েছেন বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১৪ দলের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে শেষে গণভবনের সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “সারাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে কারফিউ জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পরও সহিংসতা চালানো হচ্ছে। কোটা আন্দোলনের ওপর ভর করে যেন কেউ রাজনীতি করতে না পারে সে জন্য সতর্ক আছে সরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশবাসীর সহযোগিতা চাওয়ার কথা জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাষ্ট্রীয় সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দিনভর সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ
কোটা সংস্কার ঘিরে চলমান আন্দোলনে শুক্রবারও রাজধানীতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বাস, প্রাইভেটকার, পিকআপ, মোটরবাইকসহ বেশকিছু পরিবহন অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার সারাদেশে ৩৪টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এরমধ্যে ২৯টি ঘটনা ঢাকা মহানগরে। এই আগুনের ঘটনায় বিআরটিএ ভবন, সেতুভবনসহ পাঁচটি সরকারি ভবন, দুটি বেসরকারি ভবন, একটি থানাও রয়েছে। বিবিসি বাংলাকে এমন তথ্য জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল। জানা গেছে, এর বেশিরভাগ ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে এবং তাদের গাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। গত দুই দিনে ফায়ার সার্ভিসের ৪টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে আরও ১৩টি গাড়ি। এসব ঘটনায় ১৮ জন অগ্নিনির্বাপন কর্মী আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।
সুত্র: বিবিসি বাংলা