কোটা সংস্কার আন্দোলন
চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় আরো পাঁচজনের মৃত্যুর তথ্য জানা গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এদের মরদেহ নেয়া হয়েছে।
এদের মধ্যে একজন বাংলাদেশের একটি অনলাইন সংবাদপত্র ঢাকা টাইমসের মেডিকেল করেসপন্ডেন্ট ৩২ বছর বয়সী মেহেদী হাসান। যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও তিন নিহত ব্যক্তির মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে আছে। এরা হলেন- ওয়াসিম শেখ (৪০), নাজমুল (২৮) ও মোহাম্মদ (২২)। এর আগে, বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে অচেতন অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক রিক্সা চালককে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
চলমান কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে নরসিংদীতে দুই জন নিহতের হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীর সদর হাসপাতালের আরএমও মো. মাহমুদুল কবির বাশার এবং নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মিজানুর রহমান নিহতের খবর নিশ্চিত করেছেন।
নিহতদের মধ্যে একজন ১৫ বছর বয়সী তাহমিদ ভুইঁয়া। তিনি এমকেএম হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। নিহত অপর জন হলেন ১৮ বছর বয়সী ইমন আহমেদ। তিনি সদর উপজেলার পলাশ থানার বাসিন্দা।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর-জেলখানা মোড় এলাকায় দফায় দফায় এ সংঘর্ষ হয়। এতে শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে।।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু কাউছার সুমন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, “এ হাসপাতালে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত একশ’র বেশি মানুষ চিকিৎসাধীন। আরো আহত রোগী এখনও আসছে”।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচি চলাকালে সারাদেশে অন্তত দশ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। বিবিসি বাংলাকে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলো মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
এর মধ্যে রাজধানী উত্তরায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে মারা গেছেন পাঁচজন।
বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে আহত শতাধিক ব্যক্তিকে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। এদের মধ্যে চারজনের মারা যাওয়ার খবর নিশ্চিত করেন হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
উত্তরার বেসরকারি আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, তিনি বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ছিলেন।
হাসপাতালের প্রিন্সিপাল সাব্বির আহমেদ খান বিবিসি বাংলাকে জানান, এই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
ধানমন্ডি এলাকায় সংঘর্ষে আহত ফারহান ফাইয়াজ নামে রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে এক শিক্ষার্থীকে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আন্দোলনকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে রাজধানীর রামপুরায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম দুলাল মাদবর বলে নিশ্চিত করেছে বনশ্রীর ফরাজী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি পেশায় গাড়ি চালক ছিলেন।
বিকেলের দিকে রাজধানীর আফতাবনগরে আরো এক শিক্ষার্থী নিহতের খবর পাওয়া যায়। একাদশ শ্রেণিতে সদ্য ভর্তি হওয়া এই শিক্ষার্থীর নাম মো. জিল্লুর শেখ। রাজধানীর ঢাকা ইম্পেরিয়াল কলেজের ছাত্র সে। কলেজটির অধ্যক্ষ আরিফ আহমেদ বিবিসি বাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় সাভারে এক শিক্ষার্থী নিহতের খবর পাওয়া গেছে। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় এমআইএসটির এক শিক্ষার্থীকে নেয়া হয়।
এ হাসপাতালের ইনচার্জ ইউসুফ আলী বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ইয়ামিন নামে এক শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার গলায় আইডি কার্ড ছিল। তবে সেটা অস্পষ্ট থাকাতে পুরো নাম ভালোভাবে বোঝা যায়নি।”
এর আগে, মাদারীপুরে সংঘর্ষ চলাকালে পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ফায়ার ফায়ার সার্ভিস।
বাংলাদেশে বৃহস্পতিবার রাত নয়টা থেকে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং মোবাইল ইন্টারনেটসহ কোন ধরনের ইন্টারনেট সার্ভিসই পাওয়া যাচ্ছে না।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট না থাকায় বিবিসি বাংলার লাইভ পাতা আপডেটও বিঘ্নিত হচ্ছে।
এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকেও একই ধরনের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রাত সাড়ে আটটা থেকে ইন্টারনেটের গতি ধীর হওয়া শুরু করে।এরপর নয়টা থেকে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
একাধিক ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার বিবিসি বাংলাকে সেবা বিঘ্নিত হওয়ার এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে এর পেছনে কোন কারণ তারা বলেননি এবং কখন নাগাদ ইন্টারনেট পাওয়া যাবে সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেন নি তারা।
কাজীপাড়ার বাসিন্দা জিলানী রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ রাত পৌনে নয়টা থেকে বাসায় ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না। সার্ভিস প্রোভাইডারকে ফোন করলে জানান লাইনে কোন সমস্যা নেই, উচ্চ পর্যায় থেকে ইন্টারনেট সব জায়গায় বন্ধ করা আছে ”।
দেশের বিভিন্ন জেলায় ও একই অবস্থার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
চাঁদপুরের নাদিয়া খান নামে এক বাসিন্দা জানান, “নয়টার পর থেকেই বাসায় ইন্টারনেটের সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না ”।
গত কয়েকদিনের চলমান কোটা আন্দোলনের সহিংসতামূলক ঘটনার সময় বুধবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন স্থানে ব্যাহত ছিল ইন্টারনেট সেবা।