সৌদি আরবকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রধান উপদেষ্টার গণভবন পরিদর্শন, দিলেন জাদুঘর নির্মাণের নির্দেশনা
সৌদি রাষ্ট্রদূতের সাথে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ
আয়কর নিয়ে যে সুখবর দিলেন প্রধান উপদেষ্টা
সে জানতো সবাই তাকে ভালোবাসে!
প্রকাশিত: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৯
বন্ধু, সহকর্মী আর পরিবারের সদস্যরাতো বটেই নিউইয়র্কে তার শুভানুধ্যায়ী অগুনতি। নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও তার ভক্ত কিংবা অনুরক্ত ছিলেন। তাকে সকলেই ভালোবাসতেন। আর তিনি নিজেও সেটা জানতেন। তিনি জানতেন তিনি সকলের প্রিয়। রাসেল বুন। নিউইয়র্কের জনপ্রিয় টিভি চ্যানেল এনওয়াই১ এর অ্যাঙ্কর সাংবাদিক। সম্প্রতি পৃথিবীর সব মায়া কাটিয়ে, ভক্তদের কাঁদিয়ে তিনি পারি জমিয়েছেন পরপারে। কিন্তু রেখে গেছেন নেই অগুনতি ভক্ত, অনুরক্তদের। শোকসভায় তারাই তাকে স্মরণ করলো সকল ভালোবাসায়। ব্রুকলিনে মঙ্গলবার ছিলো সেই শোকানুষ্ঠান। এমি-অ্যাওয়ার্ড জয়ী সাংবাদিকের মৃত্যু হয় গত ৩ সেপ্টেম্বর। প্যাকক্রিয়েটিক ক্যান্সারে ভুগছিলেন রাসেল বুন। মরণঘাতি সে রোগ মাত্র ৪৮ বছর বয়সেই কেড়ে নিলো এক মেধাবী সাংবাদিককে।
সেলিব্রেটি সাংবাদিক তিনি ছিলেন। আর তা অর্জন করেছিলেন নিজের কাজ দিয়েই। তাই ক্রিশ্চিয়ান কালচারাল সেন্টারে তার স্মরণসভায় বক্তাদের মুখে ঝড়লো নানা প্রশংসাবাক্য। নিউইয়র্কের এটর্নি জেনারেল লেটিশিয়া জেমস বললেন, রাসেল বুন ছিলেন একজন ব্রিলিয়ান্ট জার্নালিস্ট, অনন্য এক স্টোরি টেলার।
রাসেল বুন কখনোই ক্যান্সারকে তার আনন্দ কেড়ে নিতে দেননি। তার উচ্ছ্বাসময় প্রাণ চাঞ্চল্যও কেড়ে নিতে পারেনি ক্যান্সার। আর ক্যান্সার কখনোই পারেনি তার চেতনাবাহী মনটাকেও ভেঙ্গে দিতে, বলেন জেমস। তিনি এই নিউইয়র্ক সিটিটাকে বুঝতে পারতেন। এর কমিউনিটিগুলোকে জানতেন এবং ভালো করে বুঝতে পারতেন এর মানুষগুলোকে। আর সেভাবেই গোটা নিউইয়র্কের সম্পদ হয়ে উঠেছিলেন তিনি, বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
মেয়র এরিক অ্যাডামস তার বক্তব্যে বলে, রাসেলের মৃদু হাসি কিংবা তার উচ্চ হাসিতেই লুকায়িত ছিলো এক অনন্যতা। আর সেভাবেই তিনি নিজেকে উপস্থাপন করতেন।
প্রাণশক্তি কখনো সৃষ্টি কিংবা ধ্বংস হতে পারে না। কেবল ধরন বদলাতে পারে, আর সেটা যদি সত্য হয়, তাহলে রাসেল বুনের কখনোই মৃত্যু হবে না, বলেন মেয়র এরিক।
২১ বছর ধরে রাসেল বুন নিউ ইয়র্ক ওয়ান এর কর্মী ছিলেন। তিনি ছিলেন অনেকের বন্ধু আর অনেকেরই আদর্শ শিক্ষক। নগরের ৫টি বোরোয় যারা বাস করেন, তাদের কাছে রাসেল বুন একটি প্রিয় নাম। ২০০২ সালে পত্রিকাটিতে যোগ দেন এই সাংবাদিক।
কুইন্সের জন্য প্রয়োজনীয় জরুরি সব খবর আন্তরিকতা ঢেলে উপস্থাপন করতেন রাসেল, বললেন সিটি কাউন্সিলের স্পিকার অ্যাড্রিন অ্যাডামস। মানবতার কথা তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করতেন যা কেবল তার পক্ষেই সম্ভব ছিলো। তার ব্যক্তিত্ব, তার কৌতুক বোধ, সমানুভূতি, তার গল্প বলার ধরন এসবই সকলকে টানতো। কেবল দর্শক হিসেবেই নয়, বিষয় হিসেবেও, বলেন কাউন্সিল স্পিকার।
কুইন বোরোর প্রেসিডেন্ট ডোনোভ্যান রিচার্ডস বলছিলেন, আজ এখানে আপনারা যারা বসে আছেন তারা সকলেই জানেন, এই নগরীর জন্য রাসেল বুনে কতটা অর্থবহ ছিলেন। তার মতো করে আমাদের সকলকে এক করতে আর কেউ পারেনি। আর আমি আপনাদের জানাতে চাই, আমি এখানে আজ কুইন্স বোরোর প্রেসিডেন্ট হিসাবে আসিনি, আমি আমার প্রিয় বোনটির জন্য এসেছি।
প্রায় দুই দশক ধরে নগরের স্ট্রিটগুলো থেকে মানুষের গল্প বলার পর ২০২১ সালে রাসেল বুন অ্যাঙ্কর হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। সেখানে তিনি নিউইয়র্কারদের প্রতি সন্ধ্যায় দিনের সকল খবর জানাতেন। যে একটি শো'র মধ্য দিয়ে নগরীর কমিউনিটিগুলোর প্রতি তার ভালোবাসা, ব্রেকিং নিউজের প্রতি তার আত্মনিয়োজন এর নিউইয়র্কারদের জীবনধারার ওপর তার অনুধাবনগুলো স্পষ্ট হয়ে উঠতো।
খবরের পেছনে ছোটা এই মানুষটি এত কর্মযজ্ঞের পরেও তার পরিবার, তার মা, ভাই-বোন, স্বামী টড ও দুই ছেলে কার্টার ও জ্যাকসনের ব্যাপারে ছিলেন সমানভাবে সম্পৃক্ত। টড ও রাসেলের দেখা হয় এনওয়াই১-এই আর তাদের বিয়ে হয় ২০০৫ সালে।
স্মরণসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে টড বলেন, রাসেল আমাদের যা তার পক্ষে দেওয়া সম্ভব তার সবটুকুই দিয়ে গেছে।
আমার দুঃখ যে রাসেল আজ এখানে এই সব কিছু দেখার জন্য শারীরিকভাবে অনুপস্থিত, কিন্তু আমি মনে করি সে এখানে আছে। আজ এখানে সকলের মুখে তার প্রতিচ্ছবি আমি দেখতে পাই। তার ভাইয়েরা, তার ছেলেরা আর আমি, আমাদের চোখের পানিই বলে দেয়, আমরা তাকে মিস করছি।
তবে সে ছিলো সুখি, সে ছিলো শক্তিধর। আর আমি তার সব কিছুতেই খুশি। সে জানতো সবাই তাকে ভালোবাসে। আর বিনিময়ে সেও সবাইকে ভালোবাসতো, বলেন টড।