১০ জুন রাজধানীতে ফের সমাবেশের ঘোষণা জামায়াতের

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ৫ জুন ২০২৩, ২২:০৬
...
সংঘাত এড়াতে আজ ৫ জুনের বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছে জামায়াত। একইসঙ্গে আগামী ১০ই জুন শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল পালনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি। নতুন কর্মসূচি পালনের অনুমতির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হবে জানানো হয়েছে। আজ বেলা ১১টায় রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল। এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য পোষণ করে এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। বিশেষ করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও নিশি রাতের ভোটের পর, আওয়ামী লীগের অধীনে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে বলে জনগন বিশ্বাস করে না।

এখন পর্যন্ত সরকার জনগণের দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের ও নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে আটক রেখে আবারো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করার পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন কারাগারে আটক রয়েছেন, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ অসংখ্য নেতাকর্মী ও আলেম-উলামা। আমরা অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি।
মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিজেরাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।

উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মুক্তি না দিয়ে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে জেলখানায় আটকে রাখা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা ও বন্দি থাকাবস্থায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অথচ গত ১৫ বছর যাবত রাজপথে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পুলিশের নিকট শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ২৮শে মে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিকট অনলাইনে ৫ই জুন সমাবেশের জন্য আবেদন করে। ২৯শে মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন আইনজীবীর একটি প্রতিনিধি দল কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫ই জুন সমাবেশ করার আবেদন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নিকট গেলে কমিশনার কার্যালয়ের গেট থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশে বাধা দেয়ার এটি একটি নিকৃষ্ট নজির হয়ে থাকবে।

এর আগে ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দফা সমাবেশ করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করা হয়। প্রশাসন কোনটার ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করেনি। বরং প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ করলে পুলিশ সেখানে চড়াও হয় এবং অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হামলা করে আহত ও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে।’ সংবিধান প্রদত্ত এই অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের; কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি উল্টো প্রবণতা। বারবার সহযোগিতা চাওয়ার পরও সরকার সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে একতরফা ও নৈশকালীন নির্বাচন ছাড়া প্রতিটি সংসদেই জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ পর্যন্ত বিভিন্ন সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৬১টি আসনে বিজয়ী হয়েছে। বহু লংখ্যক উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ বিপুল সংখ্যক জনপ্রতিনিধি জামায়াত থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।জামায়াতে ইসলামী দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। কোটি কোটি মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে সমর্থন করে। জামায়াতকে সভা সমাবেশ করতে না দিয়ে কোটি কোটি মানুষের অধিকার বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী আইন ও সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমাদের বিশ্বাস ছিল, সরকার শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অনুমতি দিবে। কিন্তু সরকার এবারও অনুমতি না দিয়ে সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছ। রাজধানীতে কী শুধু ছুটির দিনে সভা সমাবেশ হয়? অন্যান্য রাজনৈতিক দল কর্ম দিবসে সভা সমাবেশ করতে পারলে জামায়াতে ইসলামীর ক্ষেত্রে দ্বিমুখী আচরণ কেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধা দেয়া পুলিশের কাজ নয়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) এর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের অধিকার আদায়ে সুনিদ্দিষ্ট ৩টি দাবিতে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবীতে এই কর্মসূচি পালন করতে চায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। গোয়েন্দা প্রধান এখানে কীসের অসৎ উদ্দেশ্য খুজে পেয়েছেন? রাষ্ট্রের সেবক হয়ে অসত্য কাল্পনিক কথা বলে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়া সম্পূর্ন বেআইনি। বরং শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রাম বাস্তাবায়ন বাধাগ্রস্থ করতে গত ৪ঠা জুন দিবাগত রাতে বেশকিছু সংখ্যক নেতাকর্মিকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে তাদের বাসাবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এছাড়া অসংখ্য নেতাকর্মিদের পরিবারের সদস্যবৃন্দকে বিনা অপরাধে হয়রানি করা হয়েছে যা আইনের শাসনের চূড়ান্ত পরিপন্থি।

পুলিশ যদি ১০ই জুন কর্মসূচি পালনের অনুমতি না দেয় তাহলে জামায়াত কি করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ৫ই জুনের কর্মসূচি অনুমতি না দেয়ার কারণ হিসেবে ডিএমপি থেকে বলা হয়েছিল- ওয়ার্কিং ডে হওয়ায় অনুমতি দেয়া হয়নি। তাই ১০ই জুন শনিবার ওয়ার্কিং ডে না হওয়ায় আশা করি প্রশাসন অনুমতি দেবে। শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের কর্মসূচি পালিত হবে। যদি কোন শব্দ সংবিধানে নেই। যেহেতু সংবিধানে সভা-সমাবেশের অধিকার দেয়া আছে সেহেতু পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করবে। আর যদি তারা সেটা না করে এবং বারবার সংবিধান লঙ্ঘন করে তাহলে জনগণের রোষের সম্মুখীন হবে।

সর্বশেষ