মজা নয়! সত্যিই তাই! ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম সাক্রামেন্টোয় একটি টাউন হাউস লাগোয়া বিশাল তৃণভূমিতে দেখা গেলো শত শত ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। আর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে ঘাস খেয়ে যাচ্ছে। এই ভূমির ঘাসগুলো এরই মধ্যে হলুদ হয়ে উঠেছে। গ্রীস্মের খরতাপে দিন কয়েকেই তা আরও শুকনো খরখরে হয়ে যাবে। আর তাতে ঘাসগুলো থেকেই জ্বলে উঠতে পারে আগুন। যা দাবানল আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে বনাঞ্চলে। আর সাথে সাথে লোকালয়েও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতসব আশঙ্কা থেকে ঘাসগুলোকে দমনের আগে থেকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই ছাগলের পাল। তৃণভূমি ঘুরে ঘুরে তারাই সাবার করছে ঘাস।
ভোরাসিয়াস হারবিভোরাস... গাল ভরা যার বৈজ্ঞানিক নাম এই ঘাসগুলো গেলো বছরের দীর্ঘ শীতে বরফ ঢাকা থাকা পর গ্রীস্মের বৃষ্টিতে সবুজ হয়ে উঠলেও এখন গ্রীস্মের খরতাপে তা আবারও শুকনো খরখরে।
"এই ঘাসগুলোই দাবানলের বড় জ্বালানি হিসাবে কাজ করে। এগুলো বেশ লম্বা হয়ে বেড়ে ওঠে। আর গ্রীস্ম এসে সেগুলো শুকিয়ে গেলে আগুন হয়ে জ্বলতে বেশ উপযোগী," বলছিলেন ওয়েস্ট স্যাক্রামেন্টোর পার্ক সুপারিন্টেন্ডেন্ট জ্যাসন পুপোলো।
ছাগলগুলো যেখানে ঘাস খাচ্ছিলো তার পাশে দাঁড়িয়েও একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছিলেন জ্যাসন।
ঘাস খাইয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল প্রতিহত করার এই লক্ষ্যে ছাগলই সবচেয়ে উপযোগী কারণ ছাগলের খাদ্যতালিকা থেকে বাদ যায় খুব কমই উদ্ভিদ। 'ছাগলে কি না খায়' সে কথারই আরেকবার প্রমাণ মিললো এখানে। এছাড়া ছাগলগুলোই চড়তে চড়তে পাথুরে পাহাড়ের ফাঁক ফোঁকর গলে উদ্ভিদগুলো খেয়ে আসতে পারে, যেখানে সাধারণভাবে যাওয়াও দুষ্কর। ঘাষগুলোকে রাসয়নিক ছিটিয়ে মেরে ফেলার ক্ষতিকর প্রভাবতো রয়েছেই। তার তুলনায় ওগুলো ছাগল দিয়ে খাইয়ে নিতে পারলেই ভালো, এমনটাই বলছিলেন উদ্যোক্তারা।
তবে এই সাথে বেড়ে গেছে ছাগল চড়ানো রাখালের কদরও। তাদের মাসিক মজুরি আগে যেখানে ৩ হাজার ৭৩০ ডলার ছিলো সেটা এখন বেড়ে ১৪ হাজার পর্যন্ত হয়ে গেছে, এমনটাই বলছিলেন ক্যালিফোর্নিয়া ফার্ম ব্যুরোর কর্মকর্তারা।
কোম্পানিগুলো এতে বিপাকে পড়েছে। ফলে তাদের চাপে সেখানে শ্রম আইনেই পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। একেকজন রাখাল কিংবা পালকের অধীনে থাকে ৪০০টি করে ছাগল। ক্যালিফোর্নিয়ার এই রাখালদের অনেকেই আসেন পেরু থেকে। আর তারা তাদের নিয়োগ কর্তারা তৃণভুমির কাছাকাছি কোনো একটি ট্রেইলারে থাকতে দেন। এখন এই রাখালদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন শ্রম বিষয়ক আইনজীবীরা। তারা বলছেন, এই ছাগলপালকদের বর্তমান জীবন ধারনের পরিস্থিতি নিয়ে সঠিক ধারনা নিয়ে তবেই আইন পরিবর্তন করতে হবে। বিশেষ করে অঙ্গরাজ্য সরকার নিজেই যখন দাবানলের ঝুঁকি কমাতে এই ছাগলের পাল ব্যবহারে উদ্যোগী।
গত কয়েক বছর ধরে ক্যালিফোর্নিয়া দাবানলের মারাত্মক শিকার। আগুনে পুড়েছে হাজার হাজার বাড়ি, অনেক মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। সে কারণে তৃণভূমিগুলো সাফ করতে ছাগলেরই ব্যবহার চলছে।
ওয়েস্টার্ন গ্র্যাজারস এর মালিক টিম অ্যারোস্মিথ বলছিলেন, এবারের গ্রীস্মে তার মোবাইল ফোনে কল আসতেই থাকে। সকলেই ছাগলের বরাদ্দ চায়। বছরের পর বছর এই চাহিদা বাড়ছেই।
নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার রেড ব্লাফে টিম'র কোম্পানিতে ৪০০০ ছাগল রয়েছে। গোটা নর্দার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন স্থান থেকে ঘাসখাওয়ার জন্য এইসব ছাগলের জন্য অফার আসে। কিন্তু পালকদের মজুরি বৃদ্ধির কারণে তারা টিকতে পারছেন না। এই ভাবে চলতে থাকলে ছাগলগুলো কসাইখানায় বিক্রি করে দিতে হবে, না হয়তো আমরা দেউলিয়া হয়ে যাবো, বলেন টিম।
কোম্পানিগুলো অবশ্য এতদিন এই ছাগল পালকদের মাসিক ন্যুনতম মজুরি ১,৯৫৫ ডলার দিতেন। কিন্তু ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত একটি আইনের বলে এই ছাগল পালকেরা ওভারটাইম পাওয়া শুরু করেন। এতে তাদের মাসিক আয় সাড়ে ৩ হাজার ছাড়িয়ে যায়। যা ২০২৫ সাল নাগাদ সাড়ে ৪ হাজারের কাছাকাছি হবে।
কোম্পানিগুলো বলছে তাদের পক্ষে এত অর্থ দেওয়া সম্ভব নয়। এ কারণে ঘাষ খাওয়ার জন্য মূল্যের হারও তারা বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে অনেকের পক্ষে আর ছাগল দিয়ে ঘাষ খাওয়ানোর এই সেবা দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না।
ক্যালিফোর্নিয়া ক্লাইমেট অ্যান্ড এগ্রিকালচার নেটওয়ার্কের পরিচালক ব্রায়ান শোব বলছিলেন, মজুরি বাড়ানো প্রয়োজন, তবে মাসে ১৪ হাজার ডলার মজুরি বাস্তবসম্মত নয়। সুতরাং বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা দরকার।