বাইডেন কি আবার, নাকি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী নতুন কেউ?


প্রকাশিত: ২৫ নভেম্বর ২০২২, ১০:১১
...

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেন, তাহলে তাঁর বিকল্প কে? মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভয়ানক ‘লাল ঝড়’-ই শুধু এড়াতে পারেননি, সিনেটে নিয়ন্ত্রণ ধরেও রাখতে পেরেছে। প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকানরা মাত্র সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। মূল্যস্ফীতিতে জেরবার ও বাইডেনের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে থাকা সত্ত্বেও ডেমোক্র্যাটকে এই নির্বাচনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছে। কয়েক দশকের মধ্যে এবারই ক্ষমতাসীন দল মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভালো ফলাফল দেখাতে পেরেছে। বাইডেনের এই জয় ট্রাম্প সমর্থক বড় প্রার্থীদের পরাজয়ের চেয়েও মধুর। এতে করে রক্ষণশীলদের মধ্যে ট্রাম্পের সমালোচনা বড় পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে।

এরপরও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার পরিকল্পনা করেছেন বাইডেন। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী বছরের ১৫ নভেম্বর এই নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু বাইডেন কি সেই নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিংবা তাঁর কি উচিত প্রার্থী হওয়া? ২০২৪ সালে বাইডেনের পদত্যাগ করা উচিত—এ রকম চাপা গুঞ্জন এখন বেশ ভালোভাবেই ছড়িয়ে পড়েছে। মধ্যবর্তী নির্বাচনের ভোটারদের মধ্যে পরিচালিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার মত দিয়েছেন বাইডেন যেন আবার নির্বাচনে অংশ না নেন। এই ভোটারদের মধ্যে ৪০ শতাংশ ডেমোক্র্যাট সমর্থক। এ থেকে এটা স্পষ্ট যে বাইডেনের কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা এতটা ভালো ফল করেনি।

বাইডেনের মতো বয়সের বাধা বার্নি স্যান্ডার্সের জন্য বড় সমস্যা। তাঁর বয়স এখন ৮১ বছর। বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের সমর্থকদের একটা বড় অংশের মাঝেও তাঁর আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এমনকি এখন যদি বাইডেনের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যায়, তারপরও নিজের বয়স তো তিনি বদলাতে পারবেন না। এ মাসেই তিনি ৮০ বছরে পা দিয়েছেন। আমেরিকার ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বয়স্ক প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় দফা মেয়াদ যদি তিনি শেষ করতে পারেন, তাহলে তাঁর বয়স হবে ৮৬ বছর। বাইডেন বলছেন, শারীরিকভাবে তিনি দারুণ ফিট আছে। ভোটারদের তাঁর সম্পর্কে ধারণা ভিন্ন। বিশেষ করে হোঁচট খেয়ে ব্যথা পাওয়াসহ কিছু ঘটনায় বাইডেনের ফিটনেস নিয়ে জনমনে সন্দেহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক।

২০২৪ সালের নির্বাচনে লড়ার ইঙ্গিত বাইডেন এরই মধ্যে দিয়েছেন। ২০২৩ সালের প্রথম দিকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত আসবে। দলকে কে নেতৃত্ব দেবে, ডেমোক্র্যাটদের সেই অন্তর্দর্শন আসতে আরও কয়েক মাস লেগে যাবে। বাইডেন যদি তাঁর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসেন, তাহলে সরাসরি তাঁকে কেউ চ্যালেঞ্জ জানাবেন, সেটা ভাবা ঠিক হবে না। সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকজনের মধ্যে প্রতিযোগিতা হতে পারে। ডেমোক্র্যাটদের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কারা হতে পারেন?

কমলা হ্যারিস
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কমলা হ্যারিসেরই নিশ্চিতভাবে বাইডেনের উত্তরাধিকারী হওয়া উচিত। একজন সম্মুখসারির প্রার্থী হিসেবে হ্যারিসের নিজের মনোনয়নের বিষয়টি এখন খুব গুরুত্বের সঙ্গে সামনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। যদিও হ্যারিসের গ্রহণযোগ্যতার রেটিং এখন বাইডেনের চেয়েও নিচে এবং ডেমোক্র্যাটদের অনেকে মনে করেন, ট্রাম্প কিংবা রন ডিস্যান্টিসের মতো রিপাবলিকান প্রার্থীর বিপরীতে কমলা হ্যারিসের মনোনয়ন হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

অশ্বেতাঙ্গ নারী হয়ে হোয়াইট হাউসে এলেও প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টি বৈচিত্র্যের সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো আবেদন ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতার ঘাটতি কমলার রয়েছে।

পিট বুটিগিগ
হার্ভার্ডের স্নাতক ও ম্যাককিনসের সাবেক উপদেষ্টা পিট বুটিগিগ আট ভাষায় কথা বলতে জানেন। ইন্ডিয়ানার ছোট শহর দক্ষিণ বেন্ডের সাবেক এই মেয়র জাতীয় রাজনীতিতে উঠে আসেন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে। বাইডেনের যোগাযোগমন্ত্রী বুটিগিগ। রাখঢাকহীনভাবেই তিনি সমকামী। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাছাইপর্বে গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট তিনি পাননি কিন্তু বৈচিত্র্যকে স্বাগত জানানো ডেমোক্র্যাটরা তাঁকেই বেছে নিতে পারেন।

বুটিগিগের পাণ্ডিত্য ও রাজনৈতিক জ্ঞান নীতিনির্ধারক হিসেবে তাঁর প্রতি জনগণের আগ্রহ তৈরি করতে পারে। বুটিগিগের বয়স মাত্র ৪০ বছর। তরুণ, শহুরে ও শিক্ষিত ভোটারদের মধ্যে একটি দাগ কাটতে পেরেছেন। যদিও অন্য অংশের ভোটারদের মধ্যে কতটা দাগ কাটতে পারবেন, সেটা স্পষ্ট নয়।

গ্রিচেন হুইটমার
মিশিগানের মতো দোদুল্যমান রাজ্যে ট্রাম্প–সমর্থিত প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে হারানোর পর ডেমোক্র্যাট শিবিরে গ্রিচেন হুইটমারের গ্রহণযোগ্যতা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। গর্ভপাত অধিকারের সচকিত কণ্ঠস্বর গ্রিচেন উগ্র ডানপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাটদের সামনের সারির একজন।

জাতীয় স্তরে রাজনীতিতে হুইটমারের অভিজ্ঞতা কম। তিনি তেমনটা আলোচিতও নন। ২০২০ সালে বাইডেন তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংক্ষিপ্ত যে কয়েকজনকে রেখেছিলেন, তার মধ্যে হুইটমারও ছিলেন। কিন্তু কোভিড মহামারি খুব শক্ত হাতে ব্যবস্থাপনার জন্য শুধু রিপাবলিকানদের মধ্যে নয় জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।

গ্যাভিন নিউসম
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম নিজের মহামারি রাজনীতির মুখে পড়লেও ২০২১ সালে আস্থা ভোটে বিশাল ব্যবধানে জয়ী হন। নিউসম রাজনীতিতে নোঙর করার আগে ব্যবসায় নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তাঁর দীর্ঘ প্রস্তুতিও রয়েছে। সান ফ্রান্সিসকোর সাবেক মেয়র ও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে তাঁর যে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, তাতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার বাছাইয়ে অবতীর্ণ হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।

অ্যামি ক্লোবুচার
মিনেসোটা থেকে আসা যুক্তরাষ্ট্রের জ্যেষ্ঠ সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার ২০২০ সালে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে তাঁর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রশংসিত হয়েছিলেন। ভ্যানডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে কার্যকর সিনেটর বিবেচিত হয়েছিল অ্যামি। প্রথাগত দৃষ্টিতে তাঁকে খুব সপ্রতিভ বলে মনে হবে না, বরং অনেক ক্ষেত্রেই বিরক্তিজনক মনে হতে পারে।

সিনেট রুলস কমিটি এবং প্রতিযোগিতা নীতি, আস্থাহীনতা ও ভোক্তা অধিকারবিষয়ক জুডিশিয়ারি উপকমিটির নেতৃত্ব তিনি দিচ্ছেন। তবে প্রথম ধাপেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়া হবে, এমন নেতা তিনি নন। কিন্তু ডেমোক্র্যাট শিবিরে যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে নিশ্চিতভাবেই তাঁর নাম আসবে।

বার্নি স্যান্ডার্স
বাইডেনের মতো বয়সের বাধা বার্নি স্যান্ডার্সের জন্য বড় সমস্যা। তাঁর বয়স এখন ৮১ বছর। বার্নি স্যান্ডার্স তাঁর উদার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী হিসেবে পরিচিত। ট্রাম্পের সমর্থকদের একটা বড় অংশের মাঝেও তাঁর আবেদন ও গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে।

এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ
জুলি এম নরম্যান কো ডিরেক্টর অব দ্য সেন্টার অন ইউএস পলিটিকস
থমাস গিফট ডিরেক্টর অব দ্য সেন্টার অন ইউএস পলিটিকস

সর্বশেষ