বিশ্বকাপে নজরে থাকবেন এই পাঁচ তরুণ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২০ আগস্ট ২০২২, ১২:০৮
...

বিশ্বকাপে নজরে থাকবেন এই পাঁচ তরুণ
ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে পরীক্ষিত পাঁচ তরুণ এবার বিশ্বকাপে আলো ছড়ানোর অপেক্ষায়। ফিফার চোখে কাতারে ব্যবধান গড়ে দিতে পারেন আর্জেন্টিনার লাওতারো মার্টিনেজ, উরুগুয়ের ডারউইন নুনেস, কানাডার জোনাথন ডেভিড, ফ্রান্সের ক্রিস্টোফার এনকুনকু এবং সার্বিয়ার দুসান ভ্লাহোভিচ।

জোনাথন ডেভিড
২২ বছর বয়সী ডেভিড কানাডার হয়ে ৩২ ম্যাচেই করে ফেলেছেন ২১ গোল। দিদিয়ের দ্রগবা, স্যামুয়েল ইতো, থিয়েরি অঁরি এবং রোনালদিনহোকে আইডল মানেন তিনি। কানাডাকে ৩৬ বছর পর ফিফা বিশ্বকাপে  নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন জোনাথন ডেভিড। ২০২০-২১ মৌসুমে তিনি নাম লেখান ফরাসি ক্লাব লিলে। ওই বছরে পিএসজিকে পেছনে ফেলে লিগ ওয়ানে চ্যাম্পিয়ন হয় লিল। তরুণ ডেভিড বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল করেছিলেন।

বিশ্বকাপে  ডেভিডের কানাডা ‘এফ’ গ্রুপে লড়বে বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া ও মরক্কোর সঙ্গে। 
জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ব্রুকলিনে হলেও তিন মাস বয়সে তার পরিবার চলে যায় হাইতিতে। সেখান থেকে ৬ বছর বয়সে কানাডার অটোয়ায়। কয়েকবার যুক্তরাষ্ট্র ফুটবল দলে খেলার অফার পেয়েও ফিরিয়ে দেন ডেভিড। কানাডার ফুটবল নিয়ে স্বপ্ন অনেক বড় ডেভিডের।তিনি বলেন, ‘আমি কানাডার ফুটবলে বিপ্লব আনতে চাই। বিশ্বকাপ হলো আমাদের সেই বিপ্লবের মঞ্চ।’

লাওতারো মার্টিনেজ

লিওনেল মেসির বিদায়ের পর আক্রমণভাগের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী মার্টিনেজের ডাক নাম ‘এল তোরো’। বাংলায় যার অর্থ ‘ষাঁড়’। ২০১৮ বিশ^কাপের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন মার্টিনেজ। তবে শেষ পর্যন্ত সার্জিও আগুয়েরো, পাওলো দিবালা ও গঞ্জালো হিগুয়েনরা সঙ্গী হন মেসির। খুব বেশিদিন যায়নি। সেই মার্টিনেজ এখন মেসির ডানহাত। মার্টিনেজের ১৩ ম্যাচে ৯ গোল আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছর পর এনে দিয়েছে কোপা আমেরিকা শিরোপা, পাইয়ে দিয়েছে কাতার বিশ্বকাপের  টিকিট এবং লা ফিনালিসিমা ট্রফি। বিশ্বকাপে  আর্জেন্টিনা ‘সি’ গ্রুপে লড়বে সৌদি আরব, মেক্সিকো, পোল্যান্ডের বিপক্ষে।
সবমিলিয়ে জাতীয় দলে ৩২ ম্যাচে ২০ গোল লাওতারো মার্টিনেজের। ক্রীড়া অনুরাগী পরিবার থেকে উঠে আসা মার্টিনেজের বাবাও ছিলেন ফুটবলার। তার ছোট ভাই ইয়ানো মার্টিনেজ খেলেন বাস্কেটবল। মার্টিনেজ সম্পর্কে মেসির উক্তি, ‘সে একজন পরিপূর্ণ ফরোয়ার্ড। গোল করা তার কাছে পানিভাত। সে শক্তিশালী, বল ধরে রাখতে পারে এবং ড্রিবলেও দক্ষ।’যদিও মার্টিনেজের ফুটবল আইডল কোনো আর্জেন্টাইন কিংবা ব্রাজিলিয়ান নন! কলম্বিয়ার রাদামেল ফ্যালকাওকে গুরু মানেন তিনি।

ক্রিস্টোফার এনকুনকু
তারকার তো অভাব নেই ফ্রান্স দলে। কিন্তু একজন খেলোয়াড় যখন আরলিং হালান্দ ও রবার্ট লেভানদোভস্কির মতো স্টারদের পেছনে ফেলে বুন্দেসলিগার মৌসুমসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন, তখন তাকে গণনায় রাখতেই হবে। চলতি বছরের শুরুতে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয় এনকুনকুর। এরপর ফ্রান্সের ৬ ম্যাচের প্রতিটিতেই খেলেছেন ২৪ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। তার ফুটবল আইডল ব্রাজিলের রোনালদিনহো ও ইতালির মার্কো ভেরাত্তি।

গত মৌসুমে বুন্দেসলিগায় আরবি লাইপজিগের হয়ে ৩৪ ম্যাচে ৩৩ গোল ও অ্যাসিস্ট করা এনকুনকু বিশ্বকাপে এমবাপ্পে- বেনজেমার সঙ্গে দারুণ এক ত্রয়ী গড়ে তুলতে পারেন। তার সম্পর্কে ফ্রান্স কোচ দিদিয়ের দেশম বলেন, ‘‘উইংয়ের চাইতে স্ট্রাইকার হিসেবে ক্রিস্টোফার বেশি ভয়ঙ্কর। বাতাসেও সে চমৎকার, যদি প্রতিপক্ষ তার সমান উচ্চতার না হয়। সে দ্রুত, অ্যাথলেটিক। ফ্রান্সের জন্য এনকুনকু ‘বিগ প্লাস’ খেলোয়াড়।’’ বিশ্বকাপে  ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স লড়বে ‘ডি’ গ্রুপে অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, তিউনিসিয়ার বিপক্ষে।

ডারউইন নুনেস
প্রিমিয়ার লীগে নুনেসকে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। ২৩ বছর বয়সী এই উরুগুইয়ান স্বদেশি এডিনসন কাভানিকে আইডল মানেন। মৌসুমে লিভারপুলের প্রথম দুই ম্যাচে গোল করে আভাস দেন উজ্জ্বল আগামীর। নুনেসকে ঘিরে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন উরুগুয়েরও। জাতীয় দলের জার্সিতে ১১ ম্যাচে ২ গোল করেছেন নুনেস। অথচ অভাবের তাড়ানায় ফুটবলই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভাইয়ের কাছ থেকে সাপোর্ট পেলে হয়তোবা এতদূর আসা হতো না তার। বিশ^কাপে ‘এইচ’ গ্রুপে কোরিয়া, পর্তুগাল ও ঘানার ডিফেন্ডারদের পরীক্ষা নেবেন এই স্ট্রাইকার। নুনেসকে নিয়ে তার সাবেক ক্লাব বেনফিকার সতীর্থ আদেল তারাবত বলেন, ‘সে বিজেতা, যোদ্ধা। খুবই দ্রুত ও শক্তিশালী। বাতাসেও ভালো। ফিনিশিংয়ে চমৎকার। বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুলের মতো দলের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লীগে গোল করেছে সে। কাভানি ও সুয়ারেজ উভয়ের মিশ্রণ হলো নুনেস। আকাশই ডারউইনের সীমা।’
 

দুসান ভ্লাহোভিচ

সার্বিয়ার সত্যিকারের ‘মার্কসম্যান’ দুসান ভ্লাহোভিচ। ১৪ ম্যাচে ৭ গোল করে ২২ বছর বয়সী তারকা বলকান রাষ্ট্রটিকে নিয়ে গেছেন বিশ্বকাপে। কঠিন গ্রুপ ‘জি’-তে ব্রাজিল, ক্যামেরুন ও সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভ্লাহোভিচের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে সার্বিয়া।

সুইডিশ সুপারস্টার জলা তান ইব্রাহিমোভিচকে নিজের আইডল মানেন দুসান। ১৬ বছর বয়সেই দুসান তার সতীর্থকে বলেছিলেন, ‘আমি বেলগ্রেডের জøাতান।  বিশ্বের সেরা দলগুলোতে খেলতে যাচ্ছি সেরা সব স্ট্রাইকারের সঙ্গে।’ বর্তমানে জুভেন্টাসে খেলছেন দুসান। সিরি আ লীগে গত তিন মৌসুমে ৭৩ ম্যাচে করেছেন ৪৫ গোল। অথচ শৈশবে হতে চেয়েছিলেন বাস্কেটবল খেলোয়াড়। কিন্তু গোল করা হয়ে গেল নেশা। দুসান বলেন, ‘ম্যাচের পর আমি নিজেকে শূন্য মনে করি। যখন গোল পাই মনে হয় উড়ছি, সপ্তম স্বর্গে আছি। গোল করা আমার নেশা, আমার ভালোবাসা।’

সর্বশেষ