জিলকদ মাসের আমল ও হজের প্রস্তুতি

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
প্রকাশিত: ৩ জুন ২০২২, ১৫:০৬
...

ইসলামি হিজরি সনের চান্দ্রবর্ষের একাদশ মাস জিলকদ। হজের তিন মাস—শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজের দ্বিতীয় মাস এটি। হারাম বা নিষিদ্ধ চার মাস—রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররমের অন্যতম এ মাস। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মাঝামাঝিতে এর অবস্থান হওয়ায় এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

জিলকদ মাসের আরবি নাম ‘জুলকাআদাহ’। ফারসিতে ‘জিলকাআদা’, উর্দুতে ‘জিলকাআদ’, বাংলায় ‘জিলকদ’ রূপ ধারণ করেছে। ‘জুলকাআদাহ’ বা ‘জিলকদ’ অর্থ হলো বসা বা স্থিত হওয়া, বিশ্রাম নেওয়া। জিলকদ মাসের আগের চার মাস ধারাবাহিক নির্ধারিত ইবাদতে ব্যস্ততম মাস। অনুরূপ জিলকদ মাসের পরের দুই মাস জিলহজ ও মহররম ইবাদতের বিশেষ মাস। মাঝের একটি মাস জিলকদ। যেহেতু মুমিন সামান্য বিশ্রামের ফুরসত পেয়ে থাকেন, তাই এ মাসের নাম জুলকাআদাহ বা বিশ্রামের মাস।
বিগত ঈদুল ফিতর এবং সমাগত ঈদুল আজহা, মাঝে এই জিলকদ মাসে নির্দিষ্ট কোনো ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতে মুয়াক্কা আমল নেই বিধায় এটি জিলকদ মাস বা বিশ্রামের মাস। ঋতুর পরিবর্তনে এ সময়ে স্থানীয় আরবদের হাতে তেমন কোনো কাজ থাকত না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এ মাসে বাণিজ্য থেকে ফিরে আসত, যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকত, অন্যায়–অপরাধ-মদ্যপান থেকেও নিবৃত্ত থাকত এবং হজের প্রস্তুতি নিত। এসব কারণে এ মাসের নাম হয় ‘জিলকদ’ (লিসানুল আরব)।

জিলকদ মাসে নির্ধারিত ইবাদত না থাকলেও কিছু নফল ইবাদত করা বাঞ্ছনীয় ও শ্রেয়। হাদিস শরিফে আছে: পরকালে নেককার পরহেজগার দ্বীনদার লোকদের কোনো আক্ষেপ থাকবে না, তবে একটি বিষয় তাঁদের আক্ষেপ থাকবে, তা হলো যে সময়টা তঁারা ইবাদত ছাড়া কাটিয়েছেন, সেই সময়ের বিষয়ে তাঁদের অনুশোচনা থাকবে যে কেন তাঁরা সে সময়টাও নেক আমল দ্বারা পরিপূর্ণ করলেন না। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখনই অবসর পাও দাঁড়িয়ে যাও, তোমার রবের ইবাদতে মশগুল হও (সুরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৭-৮)।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে গুরুত্ব দাও—ব্যস্ততার পূর্বে অবসরকে, অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে, দারিদ্র্যের পূর্বে প্রাচুর্যকে, বার্ধক্যের পূর্বে যৌবনকে, মৃত্যুর পূর্বে জীবনকে (মুসলিম)।’ ‘কিয়ামতের দিনে হাশর ময়দানে কোনো আদমসন্তান পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এক কদমও নড়তে পারবে না। সে প্রশ্ন পাঁচটি—জীবন কী কাজে ব্যয় করেছে, যৌবন কী কাজে লাগিয়েছে; কোন পথে আয় করেছে, কোন পথে ব্যয় করেছে এবং নিজের জ্ঞানমতো আমল করেছে কি না (তিরমিজি, ২/৬৭; আরবাইন, নববি: ১৯,২০ ও ২১)।’

জিলকদ মাসেও বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যেমন ১ তারিখ, ১০ তারিখ, ২০ তারিখ, ২৯ তারিখ ও ৩০ তারিখ নফল রোজা পালন করা। চাঁদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ আইয়ামে বিদের সুন্নত রোজা, প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার সুন্নত রোজা। সলাতুত তাসবিহ নামাজ এবং প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নফল নামাজ—তাহাজ্জত, ইশরাক, চাশত বা দুহা, জাওয়াল ও আউওয়াবিন এবং কোরআন তিলাওয়াত ও দানখয়রাত। হজ ও কোরবানির প্রস্তুতি নেওয়া।

যাঁরা হজে যাবেন, তাঁরা হজের প্রশিক্ষণ নেবেন এবং কোরআন কারিমের সুরা হজ শুদ্ধ করে শিখবেন এবং সুরা হজের বাংলা অনুবাদ ও তাফসির পড়বেন। হজসংক্রান্ত হাদিস, ফিকহ ও বিভিন্ন বই-কিতাব পড়বেন। হজের ফাজায়েল ও মাসআলা মাসায়েল ভালোভাবে জানলে সঠিকভাবে হজ পালন করা সহজ হবে। এ জন্য আমরা দোয়া করতে থাকব, ‘আল্লাহু-মারজুকনা হাজ্জাম-মাবরুরা ওয়া জাম্বাম-মাগফুরা ওয়া সায়াম-মাশকুরা ও তিজারতান লান তাবুর।’ অর্থ ‘হে আল্লাহ! আমাদের মাবরুর ও মাকবুল হজ নসিব করুন, আমাদের সব পাপ ক্ষমা করুন, আমাদের সৎকর্মগুলো কবুল ও মূল্যায়ন করুন, আমাদের এমন সাফল্য ও ব্যবসা দান করুন, যাতে কোনো অকল্যাণ নেই (সুনানে বায়হাকি)।’

● মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com
প্রথম আলো

সর্বশেষ