যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনায় ৩ বিষয়ে গুরুত্ব 

বাংলা পত্রিকা ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২৩, ১৫:০৬
...
চীনের গুপ্তচর বেলুনকে কেন্দ্র করে সম্পর্কের বড় ধরনের ফাটলের প্রায় পাঁচ মাস পর আজ (রবিবার) মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন প্রথম চীন সফরে আছেন। সফরটি আরও আগেই হওয়ার কথা থাকলেও গুপ্তচর বেলুন ইস্যুতে তা শেষ সময়ে বাতিল হয়েছিল। চীনের দাবি, এগুলো ছিল আবহাওয়া পর্যবেক্ষক বেলুন। মার্কিন সামরিক বিমান যুক্তরাষ্ট্রের আকাশসীমায় এগুলোকে ধ্বংস করে দেয়।

সফরে চীনের শীর্ষ পররাষ্ট্রনীতি কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্লিঙ্কেনের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেলেও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে। যদিও বেইজিংয়ে শুক্রবার মাইক্রোসফ্ট প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের পাশে দেখা গিয়েছিল জিনপিংকে।

বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, দুটি বৈশ্বিক পরাশক্তির মধ্যে নানা ইস্যুতে বিরোধ থাকলেও মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিকের চীন সফরে এজেন্ডার শীর্ষে থাকতে পারে তিনটি বিষয়।


সম্পর্ক মেরামত

ব্লিঙ্কেনের এই সফরটি ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর প্রথম কোনও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বেইজিং সফর। বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর অবশ্যই সবচেয়ে বেশি জোর দেবেন ব্লিঙ্কেন। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় গত মাসে ঊর্ধ্বতন চীনা ও মার্কিন কর্মকর্তারা মিলিত হলে সম্পর্কের বরফ গলা শুরু হয়।

অন্যদিকে ব্লিঙ্কেনের এই সফর নিয়ে চীনের প্রতিক্রিয়া কিছুটা শীতল। ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বুধবার রাতে ফোনালাপে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন, সম্পর্কের সাম্প্রতিক অবনতির জন্য কে দায়ী তা একেবারেই স্পষ্ট।

ব্লিঙ্কেনকে তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উচিত চীনের উদ্বেগকে সম্মান জানানো। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা বন্ধ করা। প্রতিযোগিতার নামে চীনের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা উচিত।’

স্টেট ডিপার্টমেন্টের জ্যেষ্ঠ পূর্ব এশিয়া কূটনীতিক ড্যানিয়েল জে ক্রিটেনব্রিঙ্ক বলেন, ‘দুইজন একে অপরের সঙ্গে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় তাতে কোনও ধরনের অগ্রগতি আশা করা ঠিক হবে না। সম্পর্ক ঠিক করতে হলে দুই দেশকেই নিজেদের আগ্রহ দেখাতে হবে।’


বাণিজ্য সংঘাত কমানো

চীনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সম্পর্ক একটা নড়বড়ে অবস্থান থেকে শুরু হয়েছিল। কারণ তিনি তার পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রণীত বাণিজ্য ব্যবস্থা বাতিলে রাজি নন। এর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি পণ্য আমদানির ওপর বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপ।

আবার বাইডেন ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিতে মার্কিন শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার প্রয়াসে চীনে মার্কিন কম্পিউটার-চিপ রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। প্রতিক্রিয়ায় চীন মার্কিন প্রতিষ্ঠান মাইক্রোনের কম্পিউটার মেমরি চিপ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপ সহকারী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক সমন্বয়কারী কার্ট ক্যাম্পবেল চীনের উদ্বেগের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তার মতে, এসবের পেছনের কারণগুলো সফরে হয়তো ব্যাখ্যা করবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ ছাড়া সামনের দিনগুলোয় আর কি কি হতে পারে তারও একটা ধারণা দিতে পারেন ব্লিঙ্কেন।

যদি কম্পিউটার প্রযুক্তি দুটি পরাশক্তির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার জন্য নির্ধারিত একটি ক্ষেত্র হয়, তবে মাদক কারবারের জন্য বিষয়টি আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে।

হেরোইনের চেয়ে বহুগুণ শক্তিশালী সিন্থেটিক ওপিওড ফেন্টানাইল তৈরিতে ব্যবহৃত চীনা-উৎপাদিত রাসায়নিক উপাদানগুলোর রফতানি কমিয়ে আনতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ফেন্টানিলের অতিরিক্ত ব্যবহারে মৃত্যুর হার গত সাত বছরে তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে দেশটিতে।


যুদ্ধ এড়ানো

ইউক্রেন-রাশিয়া বিরোধকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বেলুনের ঘটনার পর রাশিয়ায় অস্ত্র পাঠানোর কথা ভাবছে চীন। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবিলম্বে এগুলো ব্যবহার করা হবে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

সফরে ব্লিঙ্কেন হয়তো এ বিষয়ে চীনকে সাবধান করবেন। তিনি বলতে পারেন, চীন যদি রাশিয়াকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা দেয়, তবে পরিণতি গুরুতর হবে।

তাইওয়ান প্রণালী এবং দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা যুদ্ধজাহাজ কয়েক দফায় মুখোমুখি হয়েছে। চীন এলাকাটিকে নিজেদের বলে দাবি করে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র জোর গলায় বলে আসছে- এটা আন্তর্জাতিক জলসীমা।

ব্লিঙ্কেন এবং তার কূটনৈতিক দল বলেছে, এই সফরে তাদের লক্ষ্য উত্তেজনা কমিয়ে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করা। তাই উভয় পক্ষের জন্য এই সফরের একটি সন্তোষজনক ফলাফল হতে পারে কেবল যোগাযোগের চ্যানেলগুলো চালু করা; যা সামরিক সংঘর্ষ এড়াতে অনেকটায় সাহায্য করবে।

সূত্র: বিবিসি

সর্বশেষ