ইসলাম নিয়ে ধারণা বদলাতে বিশ্বকাপের সময় যা করছে কাতার


প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১২
...

কাতারে চলছে বিশ্বকাপ ফুটবল। এই প্রথম কোনো মুসলিম দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল হচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে কাতারে জড়ো হওয়া হাজারো বিদেশি দর্শকদের সামনে ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য তুলে ধরছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। ইসলাম সম্পর্কে তাঁদের ধারণা, মানসিকতায় বদল আনতে চাইছে কাতার। কাজটি কাতার কীভাবে করছে, তা এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

কানাডীয় দম্পতি ডোরিনেল পোপা ও ক্লারা পোপা। বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে তাঁরা এখন কাতারে রয়েছেন। কাতারে অবস্থানকালে তাঁরা দেশটির বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখছেন।

কাতারের রাজধানী দোহার কাটরা সাংস্কৃতিক জেলায় একটি অটোমান-শৈলীর মসজিদ রয়েছে। এটি দোহার ‘নীল মসজিদ’ নামে পরিচিত। কারণ, মসজিদটির দেয়ালে রয়েছে দামি নীল ও বেগুনি রঙের টাইলস। এই মসজিদটি দেখার জন্য ডোরিনেল-ক্লারাকে নিয়ে যান তাঁদের গাইড।৫৪ বছর বয়সী ডোরিনেল একজন হিসাবরক্ষক। তিনি বলেন, তাঁরা এই প্রথম ইসলাম ধর্মের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন।ডোরিনেল বলেন, ইসলামের সংস্কৃতি ও ধর্মাবলম্বীদের ব্যাপারে তাঁদের ভুল ধারণা আছে। পরিচিতির অভাবের কারণে এমনটা হয়েছে।

ডোরিনেলের স্ত্রী ক্লারা পোপা (৫২) একজন চিকিৎসক। তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে তাঁদের মধ্যে এত দিন যেসব চিন্তাভাবনা ছিল, তা হয়তো এখন পরিবর্তন হবে।নীল মসজিদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে কাতার গেস্ট সেন্টার। বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট উপলক্ষে তারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজন ইসলাম ধর্মপ্রচারককে কাতারে নিয়ে এসেছে।মসজিদটির বাইরে রয়েছে অ্যারাবিক কফি ও খেজুরের ব্যবস্থা। আছে ইসলাম ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে বিভিন্ন ভাষার পুস্তিকা।

কাতারে অবস্থানরত সিরিয়ার স্বেচ্ছাসেবক জিয়াদ ফাতেহ বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবল হলো লাখো মানুষকে ইসলামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার একটি সুযোগ। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ‘ভুল’ ধারণা পাল্টে দেওয়ার একটি সুযোগ।জিয়াদ ফাতেহ আরও বলেন, তাঁরা মানুষকে নৈতিকতা সম্পর্কে বলছেন। পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব সম্পর্কে বলছেন। প্রতিবেশী ও অমুসলিমদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্পর্কে বলছেন।মসজিদটির কাছেই স্বেচ্ছাসেবকেরা একটি টেবিল বসিয়ে কাজ করছেন। এখান থেকে নারী দর্শনার্থীদের নানা প্রশ্নের জবাব দেওয়া হচ্ছে। এখানে লেখা রয়েছে, ‘আমাকে কাতার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুন।’

যাঁরা সেখানে থামছিলেন, তাঁদের অ্যারাবিক কফি দেওয়া হচ্ছিল।সোমায়া নামের এক ফিলিস্তিনি স্বেচ্ছাসেবক বলেন, অধিকাংশ দর্শনার্থী পর্দা, বহুবিবাহ ও নারীরা নির্যাতিত হন কি না, এসব নিয়ে প্রশ্ন করছেন।কাছেই দর্শনার্থীরা ইসলাম নিয়ে পাঁচ মিনিটের ভার্চ্যুয়াল রিয়্যালিটি ট্যুর উপভোগ করতে পারছেন।বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালে কাতারজুড়েই ইসলাম নিয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে।দেশটির পার্ল জেলায় অনেক প্রবাসী থাকেন। সেখানে অনেক ব্যয়বহুল ক্যাফে-রেস্তোরাঁ আছে। সেখানে নানাভাবে ইসলামের প্রচার চালানো হচ্ছে। ভালো নৈতিকতা গঠনের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

কাতারের শপিং মলগুলোতেও ইসলাম প্রচারে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।দেশটির সৌক ওয়াকিফ বাজারে প্রতিদিন হাজারো ফুটবল অনুরাগী জড়ো হন। সেখানকার একটি অংশে বিনা মূল্যে বই ও পুস্তিকা রাখা আছে। সেখানে একটা জায়গায় লেখা আছে: ‘আপনি যদি সুখের সন্ধান করেন...তবে তা ইসলামেই পাবেন।’কাছেই অবস্থিত শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ইসলামিক কালচারাল সেন্টার। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১২ ঘণ্টা খোলা থাকছে।কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ আইনের অধ্যাপক সুলতান বিন ইব্রাহিম আল হাশেমি। তিনি ভয়েস অব ইসলাম রেডিও স্টেশনেরও প্রধান। তিনি বলেন, যাঁরা ধর্মান্তরিত হতে চান, তাঁদের খুঁজে বের করার কাজে বিশ্বকাপ ফুটবলকে ব্যবহার করা উচিত। পাশাপাশি ইসলামভীতি মোকাবিলায় এই আয়োজনকে কাজে লাগানো উচিত।

হাশেমি এএফপিকে বলেন, বিদেশি ফুটবলভক্তদের সঙ্গে তাঁর দেখা হলে তিনি তাঁদের ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেবেন।হাশেমি বলেন, ‘যদি আমি সুযোগ পাই, আমি তাঁদের স্বাচ্ছন্দ্য ও অনুগ্রহের সঙ্গে ইসলাম গ্রহণের প্রস্তাব দেব। যদি আমি সুযোগ না পাই, তবে আমি তাঁদের বলব, আপনি আমাদের অতিথি, মানবতার ভাই।’তবে হাশেমি জোর দিয়ে বলেন, ইসলাম জোরপূর্বক ধর্মান্তরিতকে মেনে নেয় না।কাতারের রিলিজিয়াস এনডোমেন্টস মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন, ইসলাম সম্পর্কে কত মানুষের মতামত পরিবর্তন করা গেল, সেটাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য।২১ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ার পেত্র লুলিক তাঁর পরিবারের সঙ্গে কাতারে এসেছেন। তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে আরও জানার একটি ভালো সুযোগ এই বিশ্বকাপ।

সর্বশেষ