ধরপাকড়, রিজভী-ইশরাকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, স্থান জটিলতা কাটেনি


প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৯:১২
...

আসছে ১০ই ডিসেম্বর বিএনপি’র ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতা কাটেনি। দলটি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিএনপি বলছে, তারা নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে চায়। এজন্য দ্বিতীয় দফায় ঢাকা মহানগর পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা। সমাবেশের দিন ঘনিয়ে আসায় এ নিয়ে উত্তাপ  বাড়ছে। স্থান নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও দেখা দিয়েছে। সমাবেশের আগে বাড়ছে গ্রেপ্তার, ধরপাকড়। গতকাল বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের বিরুদ্ধে একটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্য এক মামলায় ঢাকা দক্ষিণ বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পুলিশ বিএনপিকে রাস্তায় কোনো সমাবেশ করতে দিবে না।  পুুুলিশের এই অবস্থানের পাশাপাশি একইসঙ্গে ওইদিন আওয়ামী লীগের পাড়া-মহল্লায় পাহারা বসানোর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

বিএনপি’র সর্বশেষ সমাবেশ হয়েছে রাজশাহীতে। বিএনপি’র অভিযোগ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রতিটি জেলায় নতুন করে ‘গায়েবি’ মামলা দেয়া শুরু হয়েছে। এর উদ্দেশ্য আন্দোলনকে দমন করতে ভয়ভীতি ছড়ানো।

কয়েকদিন আগে ঢাকার সদরঘাটের এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, বিএনপি কিছু শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগামী ১০ই ডিসেম্বর সমাবেশের অনুমতি পাবে। আমরা বলছি একটা বড় কোনো জায়গায় যান। তাদের সর্বশেষ একটা দাবি ছিল যে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ চায়। আমাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়ার জন্য আমরা কমিশনারকে বলে দিয়েছি।

তবে বিএনপি’র পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সমাবেশের অনুমতি চাওয়া হয়নি। শুরু থেকে তারা নয়াপল্টন চেয়েছেন। গত ১২ই অক্টোবর থেকে বিএনপি জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও দলীয় কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্দলীয় সরকারের অধীন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সারা দেশে বিভাগীয় পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে গণসমাবেশ করছে। এর মধ্যে ১২ই অক্টোবর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রথম সমাবেশ হওয়ার পর ৯টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছে বিএনপি। সমাবেশের আগে পরিবহন ধর্মঘটসহ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসলেও এসব সমাবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও বরিশালের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গণসমাবেশের ধারাবাহিকতায় ১০ই ডিসেম্বর সর্বশেষ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে রাজধানীতে। বিএনপিকে ২৬ শর্তে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি। দলের যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভীকে পাঠানো চিঠিতে ডিএমপি বলেছে, ‘নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করলে যানজট ও নাগরিক দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে বিধায় সেখানে অনুমতি দেয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়াও বিএনপি’র ঘোষিত ১০ই ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে এরই মধ্যে আপত্তি আসে ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে। পাশাপাশি ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে বিএনপি’র জন্য বরাদ্দ দেয়।

এ বিষয়ে গতকাল সন্ধ্যায়  ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, আমরা ঢাকার কোনো জায়গায় খোলা রাস্তাঘাটে কাউকে সমাবেশের অনুমতি দিতে পারি না। তবে খোলা মাঠ হলে বিবেচনার বিষয় থাকে। আরামবাগে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি পাচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সেটিও একটি সড়ক। আমরা জনসমাবেশের জন্য জনগণকে দুর্ভোগে ফেলতে পারি না।

এ ছাড়াও গতকাল রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে জঙ্গি গ্রেপ্তারের বিষয়ে এক প্রেস ব্রিফিং র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এই সমাবেশকে ঘিরে উদ্ভূত যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। কোনো ধরনের নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেটার জন্য র‌্যাবের সব ব্যাটালিয়নকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাদা পোশাকেও থাকবে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা। তিনি আরও জানান, বিএনপি’র জনসমাবেশ ঘিরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে রুটিন পেট্রোল থাকবে, চেকপোস্ট থাকবে। র‌্যাবের গোয়েন্দারাও সাইবার ওয়ার্ল্ডে মনিটরিং করছে।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, সোহরাওয়ার্দীতে গণসমাবেশ করতে কী সমস্যা, তা জানালে পুলিশ সমাধান করবে। এর বাইরে সমাবেশ করার জন্য কোনো খোলা মাঠের প্রস্তাব যদি বিএনপি’র কাছ থেকে আসে সে বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।

সর্বশেষ