সিরিয়া গিয়ে ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানো শামীমার মামলায় নতুন মোড়


প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৯:১১
...

ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শামীমা বেগম যৌন শোষণের জন্য মানবপাচারের শিকার হয়ে সিরিয়ায় পৌঁছেছিলেন বলে আদালতে দাবি তার আইনজীবীদের।
রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়া শামীমা বেগমের আইনজীবীরা যুক্তরাজ্যের একটি আদালতে তাদের মক্কেলের মানবপাচার এবং যৌন শোষণের শিকার হওয়ার যুক্তি তুলে ধরেছেন।সোমবার যুক্তরাজ্যের ‘স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন’ (এসআইএসি)-এ শামীমার আইনজীবীরা ওই যুক্তি তুলে ধরেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তারা বলেন, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিলের যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তা বেআইনি। কারণ, শামীমা পাচারের শিকার হওয়া শিশু ছিলেন কিনা সে বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি।শামীমা বেগমকে যে যৌন শোষণের জন্য আইএস এর দলে ভেড়ানো, স্থানান্তরিত করা এবং সিরিয়ায় আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল তার অকাট্য প্রমাণ আছে বলে জানান আইনজীবীরা।

তারা আরও বলেন, যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে শামীমা যে মানবপাচারের শিকার একজন শিশু ছিলেন সেটি ‘সন্দেহাতীত’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা বলে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তাকে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে’।

২০১৫ সালে পূর্ব লন্ডন থেকে আরো দুই কিশোরীর সঙ্গে পালিয়ে সিরিয়া গিয়ে ইসলামিক স্টেট (আইএস)- এ যোগ দেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী শামীমা বেগম। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর।বর্তমানে ২৩ বছরের শামীমা উত্তর সিরিয়ায় সশস্ত্র রক্ষীদের নিয়ন্ত্রণাধীন একটি শরণার্থী শিবিরে আছেন। সিরিয়ায় আইএস উৎখাত অভিযানে আশ্রয় হারিয়ে শামীমার ওই শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়।

২০১৯ সালে সেখানে প্রথম তার খোঁজ মেলে। সেখানে তার একটি সন্তানও হয়েছিল, যে পরে মারা যায়। শামীমা জানিয়েছেন, এটি তার তৃতীয় পুত্র। তার আগে আরো দুইটি সন্তান হয়েছিল, দুজনই মারা গেছে।২০১৯ সাল থেকেই শামীমা দেশে ফেরার আবেদন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ওই সময়ে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমার দেশে ফেরায় বাধা দেন। শামীমার দেশে ফেরার পথ চিরতরে বন্ধ করতে তার ব্রিটিশ নাগরিকত্বও কেড়ে নেওয়া হয়।

এরপর শামীমা তার আইনজীবীর মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেন।শামীমার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, ব্রিটিশ সরকার `অবৈধভাবে' তাকে রাষ্ট্রহীন করেছে এবং তার জীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।তাছাড়া, যুক্তরাজ্যে ফিরতে না পারলে শামীমার পক্ষে আইনি লড়াইও ঠিকমত চালানো সম্ভব নয়। কারণ, সিরিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে শামীমা তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে কিংবা ভিডিও কলের মাধ্যমে শুনানিতে অংশ নিতে পারছেন না।

২০২০ সালের জুলাইয়ে আপিল আদালত তাদের রায়ে জানায়, শামীমাকে সুষ্ঠু শুনানি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, সিরিয়ার ক্যাম্পে থাকা অবস্থায় তার পক্ষে আইনি লড়াই চালানো সম্ভব নয়। এ কারণেই তাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি দেওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্য সরকার পরে সুপ্রিম কোর্টকে আপিল আদালতের ওই রায় পুনর্বিবেচনা করতে বলে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা সর্বসম্মতিক্রমে শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফিরতে দেওয়ার অনুমতি না দিয়ে বলেন, শামীমাকে যুক্তরাজ্যে ফেরার অনুমতি না দেওয়া তার অধিকারের লঙ্ঘন নয়।গত আগস্টে বিবিসি-র একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে, একজন গোয়েন্দা যিনি সে সময় কানাডার হয়ে কাজ করছিলেন, তিনি শামীমাকে সিরিয়ায় পাচার করেন। এ বিষয়ে কানাডা সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা এই অভিযোগ ‘খতিয়ে দেখছে’।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শামীমা বেগম বলেছিলেন, আইএসে যোগ দেয়ার কারণে তিনি অনুতপ্ত এবং এ কাজের জন্য তিনি সারা জীবন অনুতপ্ত থাকবেন। তিনি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের লড়াইয়ে সাহায্য করার প্রস্তাবও দেন।সোমবার শামীমার আইনজীবীদের বক্তব্য শোনার পর সামান্থা নাইটস কেসি বলেন, ‘‘এ ঘটনাটি ১৫ বছর বয়সের একটি ব্রিটিশ শিশুর সঙ্গে সম্পর্কিত, যে তার বন্ধুদের সঙ্গে আইএসআইএস এর অবিচল এবং কার্যকর প্রচারণায় প্ররোচিত, প্রভাবিত এবং আসক্ত হয়েছিল।”

সর্বশেষ