ছিনিয়ে নেয়া জঙ্গিদের হদিস মেলেনি


প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১১
...

ঢাকার আদালত থেকে প্রকাশ্যে ছিনিয়ে নেয়ার পর এখনো পর্যন্ত দুই জঙ্গির হদিস মেলেনি। ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি এবং পুলিশের ওপর হামলাকারী অপর  জঙ্গিদের ধরতে ঢাকাসহ সারা দেশে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশের পাশাপাশি অভিযান চালাচ্ছে র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা। কিন্তু, গতকাল পর্যন্ত তাদের ধরা যায়নি। 
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি না পরিয়ে এবং দুই জঙ্গিকে কেন হ্যান্ডকাফ না পরিয়ে আদালতে নেয়া হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ত্রিশালে জঙ্গি ছিনতাই হওয়ার পর ওই ঘটনার তদন্ত কমিটি জঙ্গিদের আদালতে আনা- নেয়ার ব্যাপারে একাধিক সুপারিশ করেছিল। কিন্তু, এখনো তা পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়ানো যেতো বলে মনে করছেন অনেকে। 


দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের ৫ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।  রোববার প্রকাশ্য দিবালোকে ফিল্মি কায়দায় ঢাকার আদালত থেকে শারীরিক আঘাত ও পিপার স্প্রে মেরে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। আদালতপাড়া থেকে ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গি হলো: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুরের মইনুল হাসান শামীম এবং লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর এলাকার আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব।

তারা দু’জনই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুনূর রশীদ জানান, ‘দুই জঙ্গিকে ধরতে অভিযান চলছে। যেকোনো মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’ ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একাধিক কর্মকর্তা জানান, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আদালতে হাজিরা শেষে যখন আসামিদের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন অপর পাশ থেকে দুই যুবক জঙ্গিদের ইশারা দিলে পুলিশের ওপর হামলে পড়ে তারা। এতে বোঝা যায় যে, অনেকদিন আগে থেকে জঙ্গিরা আদালতপাড়া রেকি করেছে। 


সূত্র জানায়, ওই ঘটনার পর আদালতপাড়া থেকে একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে- মোটরসাইকেল নিয়ে একাধিক যুবক দাঁড়িয়েছিল। 
এদিকে, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। সদর দপ্তরের একজন ডিআইজিকে প্রধান করে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর হোসেন। কমিটির প্রধান হলেন, পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট) মো. আমিনুল ইসলাম। সদস্য সচিব-অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম মেট্রো) মো. হাসানুজ্জামান। কমিটির সদস্যরা হলেনÑসিটিটিসির ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার (মেট্রো সাউথ) মো. আনিসুর রহমান। তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। 


এদিকে, গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. হারুন অর রশীদ জানান, আদালত প্রাঙ্গণ থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি সদস্য ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় জড়িত সবাই নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোনো সময় তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। 


এদিকে, যে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়েছে ওই মোটরসাইকেলটি পুরান ঢাকার হাসান আল মামুনের। আদালতের প্রধান ফটকের সামনে থেকে জঙ্গি আসামিদের ছিনিয়ে নিতে দুটি  মোটরসাইকেলে এসেছিল সহযোগীরা। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। বর্তমানে সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালি থানায় রয়েছে। ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই  মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের নামে। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা। পুলিশ তাকে খুঁজছে। কিন্তু, তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোটরসাইকেলটি হারিয়ে গেছে না তার সঙ্গে জঙ্গিদের যোগসাজশ আছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। 


এ ছাড়াও এ ঘটনায় আদালতের পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ডিএমপি। তারা হলেনÑ সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এস আই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালতের পিপি আব্দুল্লাহ আবু জানান, ‘দুর্ধর্ষ আসামিদের বিশেষ করে জঙ্গিদের যেভাবে নিরাপত্তা দেয়ার কথা সেরকম নিরাপত্তা ছিল না।

সর্বশেষ