ইতিহাসের সবচেয়ে দামি বিশ্বকাপ এবং...


প্রকাশিত: ২২ নভেম্বর ২০২২, ০৮:১১
...

আমরা রিজার্ভ নিয়ে চিন্তিত। দ্বারস্থ হয়েছি আইএমএফ’র কাছে। প্রতিদিনই কমছে রিজার্ভ। কেউ বলেন ২৭ বিলিয়ন ডলার, সরকার বলে বেশি। এ নিয়ে জনমনে কিছুটা আতঙ্ক। প্রতিদিনই হু হু করে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। এখানে এসে দেখলাম টাকা শুধু উড়ছেই। জানেন কি ২২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে। এর বিনিময়ে তারা কী পাবে। মাত্র ৬ বিলিয়ন ডলার।

এমনটাই আশা করা হচ্ছে। টাকা আছে তাই করেছে। এ নিয়ে আমার অন্তত প্রশ্ন নেই। আমরা পছন্দ করি আর না করি এটাই ইতিহাসের সবচেয়ে দামি বিশ্বকাপ। কাতার রেকর্ড করেছে ফুটবল দুনিয়ায়। এত বিপুল অঙ্কের টাকা খরচ করে তারা প্রমাণ করেছে- আমরা পারি, পেরেছি। ষড়যন্ত্র ছিল প্রতিবেশীদের। কেউই চায়নি কাতার এককভাবে বিশ্বকাপের আয়োজন করুক। পর্দার আড়ালে কতো টাকা ঘুষ দিয়েছে এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে। কিন্তু কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না ঠিক কতো মিলিয়ন ডলার এর পেছনে খরচ হয়েছে। কতো টাকা নিয়েছেন সেপ ব্লাটার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এই মুহূর্তে দুনিয়া কাবু অর্থনৈতিক সংকটে। দেশে দেশে সরকার পতনের আওয়াজ উঠেছে। এই সংকট থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজছেন রাষ্ট্র নায়কেরা। কিন্তু তেমন কোনো দিশা পাচ্ছেন না। এই বিশ্বকাপে যে ৩২টি দেশ এসেছে খেলতে তার মধ্যে অন্তত ১০টি  ছাড়া বাকি দেশগুলো চরম সংকটে। এরমধ্যে এশিয়ার চারটি দেশ রয়েছে। আর আমেরিকা অবশ্যই শীর্ষে। তাদের অর্থনীতি চাঙ্গা। বৃটেন বিপজ্জনক এক পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে আর্থিক সংকটের কারণে। তারপরও ফুটবল তাদেরকে টেনে এনেছে। বলা হচ্ছে, ফুটবল দুনিয়াকে একত্রিত করতে পারে। এক সময় শাসকেরা গালি দিতেন করোনাকে। আর এখন সবাই আঙ্গুল তুলছেন  ভ্লাদিমির পুতিনের দিকে।

অস্কার বিজয়ী আমেরিকান শিল্পী মরগান ফ্রিম্যানকে হাস্যোজ্জ্বল দেখা গেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। আর কাতারি ইউটিউব তারকা গানিম আল মুফতাহ তো ছিলেনই। ফ্রিম্যানের কণ্ঠে শোনা গেল ফুটবল শক্তি, ফুটবল দুনিয়াকে এক করতে পারে। নজরকাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এতে কোনো সন্দেহ নেই। অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, ছিল নানামুখী ষড়যন্ত্র। কিন্তু তারা সব চ্যালেঞ্জ উড়িয়ে দিয়ে মরুভূমির বুকে বিশ্বকাপের পতাকা উড়িয়েছে। জেগে উঠেছে মরুভূমি। যদিও এই বিশ্বকাপ সবচাইতে বিতর্কিত। প্রথম দিনেই তারা হেরেছে সাউথ আমেরিকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি ফুটবল টিমের কাছে। দেশটি হচ্ছে ইকুয়েডর। ২-০ গোলে কাতার হেরেছে এটা বড় কথা নয়। তবে তারা রেকর্ড গড়েছে বিশ্বকাপের কোনো উদ্বোধনী ম্যাচে হেরে গিয়ে। এর আগে স্বাগতিক কোনো দেশ পরাজিত হয়নি। হাজার কয়েক ইকুয়েডরের সমর্থক ছিলেন। তাঁবু আকৃতির স্টেডিয়ামে এটাই হচ্ছে নতুন রেকর্ড। সৌদি ক্রাউন প্রিন্স, মিশর, তার্কি এবং আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হাজির ছিলেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিশ্বকাপের কোনো আসরে কোরআনের আওয়াজ শোনা গেল এই প্রথম। 

এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন কাতারের এই দশা অবশ্য কেউই দেখতে চাননি। বিবিসি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করেনি। সেই এক কথা- মানবাধিকার লঙ্ঘন। সমকামিতার অভিযোগ তো ছিলই। অ্যালকোহল বিতর্কে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছে কাতার। তবে অবকাঠামো গড়ার সময় কিছু বিষয়ের জবাব দেয়নি তারা। যেমন, যে সব শ্রমিক রক্ত দিলেন তাদের কোনো মূল্য দেয়া হয়নি। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অনেক শ্রমিক, অনেক পরিবার। সেটা আলোচনায় থাকলেও কোনো সাড়া-শব্দ নেই। তবে স্বীকার করতেই হবেÑ আয়োজনে তেমন কোনো ত্রুটি নেই। ইকুয়েডরের সঙ্গে ম্যাচ বিক্রি হয়ে গেছে এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যায়নি। মাঠে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক খেলাটি উপভোগ করেছেন। সঙ্গত কারণেই কাতারিদের মন ভীষণ খারাপ। এত বিপুল টাকা খরচ করে বিশ্বকাপ আনলাম কি শুধু নামের জন্য? তাই তাদের অনেকেই খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই মাঠ ছেড়ে চলে গেছেন। মাঠের পরিবেশ ছিল সুশৃঙ্খল। বাইরেও নিরাপত্তাকর্মীদের তীক্ষè দৃষ্টি ছিল কোনো নাশকতা হয় কিনা। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে- অন্য বিশ্বকাপগুলোতে ফ্যানদের যে উচ্ছ্বাস দেখেছি এবার অনেকটাই তা ম্লান। বোধ করি আর্থিক সংকট তাদের মন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়েছে।

সর্বশেষ