যুক্তরাজ্যের ২৪৮ বছরের পুরোনো কাঠের ব্রিজ

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২২, ১১:০৭
...

প্রবাস জীবন মানেই ব্যস্ততা। পুরো সপ্তাহ কাজ করার পর যতটুকু সময় পাওয়া যায়, সেটাকে উপভোগ করার জন্য আবার তাকিয়ে থাকতে হয় আবহাওয়ার দিকে। ইংল্যান্ডের আবহাওয়ার অবস্থা এ মেঘ, তো এ রৌদ্দুর। এখানে সকালের সূর্যের আলো দেখে সারা দিন কেমন যাবে তা নির্ধারণ করা কঠিন। এজন্য ইংল্যান্ডকে বলা হয়-থ্রি ডব্লিউ দেশ। যেখানে ওয়েদার, উইমেন এবং ওয়েলথ এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।

দিনটি ছিল রোববার। আবহাওয়াটাও ছিল চমৎকার। ইংল্যান্ডে এমন আলো ঝলমলে দিন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এমন রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে আমি ও রিয়া হুট-হাট করে রেডি হয়ে বের হয়ে গেলাম টেমস নদীর ওপর একটা কাঠের ব্রিজ দেখতে।টেমস নদীর ওপর নির্মিত এ কাঠের ব্রিজটির নাম মার্শ লক। যা হেনলি শহরে অবস্থিত। লন্ডন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৩০ মাইল।

মূল ব্রিজটিতে যাওয়ার আগে আমাদের চোখ আটকে গেলো হেনলি শহরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর ঐতিহাসিক বিভিন্ন নিদর্শন দেখে। পুরো শহর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় অসংখ্য ফুলের টব। দেখে মনে হবে এ যেন ফুলের শহর। রাজা দ্বিতীয় হেনরির এ শহরের সেন্ট মেরিস চার্চ, টাউন হল, মার্কেট স্কোয়ার আর ছোট ছোট দোকানগুলোর সামনে দিয়ে যতই হাঁটছি ততই ইংরেজ ইতিহাস আর ঐতিহ্য চোখের সামনে ফুটে উঠছে।

হেনলি শহর ঘোরাঘুরির পর আমরা এসে পোঁছালাম মার্শ লক ব্রিজে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর কাঠের নির্মিত ব্রিজটির নির্মাণ শৈলী দেখে আমরা বেশ পুলকিত হই। যুগযুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রিজটি এখনো কত শক্ত আর মজবুত তা নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। যেন কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে লাগলাম ২৪৮ বছর আগের একটা কাঠের ব্রিজ এখনো কীভাবে আছে।

আমি যখন নদীর স্রোত, বাঁধ বেয়ে পড়তে থাকা পানির গর্জন আর ব্রিজটির অপরূপ শৈলী দেখায় লিপ্ত,পাশ থেকে রিয়া বলে উঠলো আমাদের দেশে একটা ব্রিজ নির্মাণের কয়েক বছর পর জরাজীর্ণ হয়ে যায়। আর এখানে কাঠের তৈরি একটি ব্রিজ শত শত বছর ধরে টিকে আছে।

সত্যিই ইংরেজদের নির্মাণ টেকসই। তাদের চিন্তা মানবতার জন্য। তারা ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ধারণ ও লালন করতে ভালোবাসে। তাইতো ২৪৮ বছর আগে নির্মিত একটি কাঠের ব্রিজ এখনো দাঁড়িয়ে থেকে জানান দিয়ে যাচ্ছে কাজে তারা কতটা সৎ আর পরিশ্রমী।

প্রতিদিন ব্রিজটি দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমান। কেউ ছবি তুলছে, কেউ আবার ব্রিজটি নিয়ে গবেষণায় ব্যাস্ত। ব্রিজটি পরিদর্শনে কোনো ফি দিতে হয় না। দর্শনার্থীদের সুবিধার জন্য রয়েছে সুবিশাল গাড়ি পার্কিং যা একদম ফ্রি।

একটি সুন্দর দিনে মার্শ লক ব্রিজ ঘুরতে এসে সত্যিই আমাদের আনন্দঘন একটি দিন পার হলো। যেমন ছিল দিনের আবহাওয়া তেমনি সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের দিনকে আরও সুন্দর করে তুললো।

সর্বশেষ